শাড়ির ও তার বিবর্তন-

পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন এই ভারতীয় উপমহাদেশে শাড়িকে এখনও বিশ্বের প্রাচীনতম পোশাক হিসেবে গন্য করা হচ্ছে। যা আজও দাপটের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান পোষাক হিসেবে বিবেচিত। বেদ ও প্রাচীনতম সাহিত্যের মধ্যেও শাড়ির উল্লেখ রয়েছে। ৬ষ্ঠ শতকের কবি ভৈরবি গান্ধারার মহিলাদের বর্ণনা দিতে গিয়ে উপমহাদেশের শাড়ীর উল্লেখ করেছেন। তবে সত্যিকার অর্থে কখন বা কীভাবে শাড়ির উৎপত্তি তা আমাদের কাছে পরিস্কার নয়। শাড়ি সংস্কৃত শাটী শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ পরিধানের বস্ত্র। সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া প্রতœবস্তুতে (৩৩০০-১০০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ) মহিলাদের দেহে এক খন্ড কাপড়ের ব্যবহার দেখা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, মেসোপটেমিয়ার মানুষরা যে লয়েন কাপড় পরত, তা থেকেই শাড়ীর ধারনার শুরু। পরবর্তীতে আর্যরা এটা বয়ে নিয়ে আসে এ উপমহাদেশে। এই দুই ধারনার সংমিশ্রনে সিন্ধু সভ্যতার মানুষদের শাড়ীর মত পোষাক পরতে দেখা যায়। সিন্ধু সভ্যতায় যে চারকোনা এক টুকরো কাপড়ের যে উদাহরণ পাওয়া গেছে; তা দেহের উপরিভাগ ঢেকে রাখত। যাকে উত্তরীয় বা ওড়না বলা যায়। আর নিচের অংশকে ঘাগরা বলা যায়। এভাবেই ধীরে ধীরে বিবতর্নের মধ্যে দিয়ে এক খন্ড কাপড় শাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। শাড়ি প্রাচীন হওয়া সত্তে¡ও, এর জনপ্রিয়তা কোনভাবেই কমেনি। পাল আমলের পাহাড়পুরের (অষ্টম শতাব্দী) কিছু ভাস্কর্যে শাড়ীর ব্যবহার দেখা যায়। সেখানে শাড়িই ছিল মহিলাদের প্রচলিত পোশাক। প্রাচীন হিন্দুধর্ম মতে, সেলাই করা কাপড় ছিল অশূচী ও অমঙ্গলের। তারা লোহার সুঁই দিয়ে কাপড়কে ছিদ্র করাকে অপয়া মনে করত। তাই হয়ত, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরার রেওয়াজ ছিল না। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেলাইবিহিন অখন্ড বস্ত্র ও পুরুষের ক্ষেত্রে ধুতি ব্যবহার করা হত। ভারতে মুসলিমদের আসার সাথে সাথে এ উপমহাদেশের মানুষের পোষাকের যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে। তারাই প্রথম সেলাই করা পোশাকের প্রচলন করে। তুর্কিরা পায়জামা, বøাউজ পরত। এরপর মোগল রাণী, রাজকুমারী এবং অভিজাত নারীরা সম্রাট আকববের আমলে নানান ধরনের বেশভ‚ষা ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে, ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা দেখল ভারতীয় নারীরা পেটিকোট ছাড়া যেভাবে শাড়ী পরে তা খুবই বেমানান ও দৃষ্টিকটু। তখন তারা ভিক্টোরিয়ান রীতি অনুসারে সমগ্র ভারতে বাধ্যতামূলকভাবে, শাড়ীর সাথে পেটিকোট ও বøাউজ ব্যবহার চালু করে। পরিবেশ ও জীবিকার ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের শাড়ি এবং শাড়ি পরার ধরন রয়েছে। আজকের শাড়ি পরার স্টাইল অবশ্য প্রথম চালু করেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মেয়েরা। রবীন্দ্রনাথের বৌদি জ্ঞানদা নন্দিনী ঠাকুরই ছিলেন এর প্রধান। তার মাধ্যমেই আধুনিক শাড়ী পরার চল আজও বর্তমান। ঐতিহ্যগতভাবে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার মহিলাদের সবচেয়ে উপযুক্ত পোশাক হল শাড়ি। বর্তমান যুগেও বাঙালি রমণীর প্রথম পছন্দ শাড়ি।

শিউলি ফুলের বিষণ্ণতার গল্প

শরতের রাতের সৌন্দর্য বলতে যে ফুলকে বোঝানো হয়, তা হলো শিউলি ফুল। তবে এ সৌন্দর্য আনন্দের নয়, বেদনার প্রতীক। শিউলি ফুলের নাকি সব সময়ই মন খারাপ থাকে। সূর্যের ওপর তার এক রাশ অভিমান। তাই তো রাতের আঁধারেই নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করে সে এবং সূর্য ওঠার আগেই লুকিয়ে ঝরে পড়ে।...

মিশরীয় সিন্ডারেলা

মিশরে তখন ১৬ তম রাজবংশের যুগ। পার্সিয়ান আক্রমনের সম্ভাবনায় দিন গুণছে মিশর। সে সময় মিশরীয় সৈন্যদের তুলনায় গ্রীক সৈন্যদের কদর ছিলো অনেক বেশি। কারণ গ্রীক সৈন্যদের দক্ষতার গল্প প্রচলিত ছিলো বিশ্ব জুড়ে। এমন সময় ফারাও এপ্রিয়েজকে হত্যা করে মিশরের নতুন ফারাও হলেন রাজবংশের...

প্রাচীন সভ্যতায় ঈশ্বরের ধারণার উৎপত্তি ও সংখ্যাগত অবনমন

যে কোন সভ্যতার প্রাচীন ইতিহাস ঘাটলেই আমরা বহু ঈশ্বর বা গডের অস্তিত্বের কথা জানতে পারি। তবে আজকের প্রেক্ষাপটে ঈশ্বর সম্পর্কে এ ধারণা অনেকটাই পাল্টেছে। কেননা বর্তমান বিশ্বে বহু ধর্মমত এখনও বিদ্যমান থাকলেও ঈশ্বরের সংখ্যার বিষয়টি কমে এসেছে। একেশ্বরবাদ কিংবা বহুঈশ্বরবাদী...

হিন্দু দেব-দেবীর ধারণা প্রাচীন মধ্য এশীয় বিশ্বাসেরই প্রতিরূপ নয় তো?

সিংহবাহনের ওপর এক হাতে চাঁদ ও এক হাতে সূর্য নিয়ে চার হাতবিশিষ্ট এক দেবী যুদ্ধবাজ ভঙ্গিমায় আসীন নিজের সন্তানদের প্রতিরক্ষার জন্য। খুব পরিচিত লাগছে তাই না? নিশ্চয়ই দেবী দুর্গার সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছেন। কিন্তু এ তো দুর্গা নয়, ব্যাক্ট্রিয়ান মাতৃদেবী ‘নানায়াহ’ বা ‘ননা’...

মহাবীর কর্ণের অন্তিম যাত্রা

সূর্যদেব অস্তে চলে যাচ্ছেন। গোধূলিবেলার লালচে আলোতে আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি আমার এই জন্মের শত্রুকে। তার গান্ডিব ধরা উদ্ধত হাতে চকচক করছে অঞ্জলিক বাণ, যা আমার মস্তক ছেদ করার জন্য একটু পরেই ছুটে আসবে।পান্ডব বীর অর্জুন, যে আমার চরম শত্রু আবার আমার সহদর কনিষ্ঠ ভ্রাতা।ওই...

মেহেদী হাসান খান

মেহেদী হাসান খান ১৮ বছর বয়সের মেহেদী হাসান খান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হলেন,কিন্তু পড়াশোনায় তার মন নাই! কিন্তু কেন? তিনি নাওয়া- খাওয়া, পড়াশোনা বাদ দিয়ে একটা ছোট্ট কম্পিউটার সম্বল করে বাংলা ভাষায় লেখার জন্য লড়াই শুরু করলেন। একটাই জেদ, বাংলা...

ঢাকার হারিয়ে যাওয়া সংগ্রহশালা- বলধা জাদুঘর

১৯২৫ সালের ঢাকা; ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে বেরিয়ে রেললাইন ধরে নারায়ণগঞ্জের দিকে কিছুদূর এগুলে উয়ারি। উয়ারির শেষ সীমানায় এক সরু রাস্তা চলে দিয়েছে নারিন্দার দিকে। সরু সেই রাস্তার একপাশে বহু পুরাতন খ্রিস্টান কবরখানা আর তার বিপরীতে উঁচু পাচিলঘেরা কম্পাউন্ডের ভেতর দোতলা...

সুন্দরবন ধ্বংসের ইতিবৃত্ত

ব্রাজিলের চিরসবুজ বিস্তৃত এমাজন (Amazon Rainforest) গহীন বনাঞ্চলকে বলা হয় বিশ্বের ফুসফুস, তেমনি সুন্দরবনও বাংলাদেশের শ্বাস-প্রশ্বাসের এক অঙ্গ। এই ঘন বনাঞ্চল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও এক প্রতিরোধ। সুন্দরবনকে ঘিরে আশেপাশের জনপদে ছড়িয়ে আছে অনেক পৌরাণিক কাহিনী। এমনি...

ঢাকার এক বিস্মৃত চিকিৎসক

দিনটি ছিল ১৫ই নভেম্বর ১৮৬৪ সাল, মঙ্গলবার। সন্ধ্যা নামতে আর বেশি দেরি নেই। নারিন্দার খ্রিস্টান কবরস্থানের দীর্ঘ ঘাসের ঝোপে অবশ্য তখনই অন্ধকার নেমে এসেছে। সন্ধ্যা হলে এই এলাকায় সহজে কেউ পা বাড়ায় না। কিন্তু সেদিন পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য- আছে ইংরেজ, আরমেনিয়, দেশী সব...

ঢাকার ঐতিহাসিক তারা মসজিদ

পূর্বকথাঃ উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। আরমানিটোলার মহল্লা আলে আবু সাঈদে তখন এক প্রভাবশালী জমিদারের বাস, নাম- মীর্জা গোলাম পীর। দাদা মীর আবু সাঈদ  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রমরমা যুগে তুরস্ক থেকে এসে ঢাকায় থিতু হয়েছিলেন। মীর্জা গোলাম পীরের আরেক নাম মীর্জা আহমেদ জান। তবে...