“আমি তো আমার সব প্রজাদের প্রতিই ভালো আচরণ করেছি। ঈশ্বরের দেখানো পথে হেঁটেছি। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও কোনো অবহেলা করি নি, শক্ত হাতে সব সামলিয়েছি। তবে আজ কেনো আমার এই পরিণতি? কেনো আজ পরিবারের বিভেদ, ষড়যন্ত্র দূর করতে পারছি না? আজ আমি রোগাক্রান্ত, অসুখ আমার পিছু ছাড়ছে না, আমি ভীষণ ভীতিগ্রস্ত আমার শরীর নিয়ে। দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণায় চোখের পানি ফেলে দিন শেষ করছি। মৃত্যু আমাকে আজ তাড়া করে ফিরছে। তবে কি শত্রুর প্রতি কঠোরতম আচরণের শাস্তিই এই ইহজীবনে আমাকে দেয়া হচ্ছে?” -মাত্র ৫৫ বছর বয়সের এই আক্ষেপ ১৫ বছরের যুবরাজের দৃঢ়চেতা মনোভাবের সাথে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বলছি শ্রেষ্ঠ নব্য অ্যাসিরীয় সম্রাট আশুরবানীপালের কথা।
বলছি সেই আশুরবানীপালের কথা, যিনি নিজের প্রাসাদে পাথরে খোদাই করে লিখে রেখেছিলেন, “আমি আশুরবানীপাল, আমি রাজাদের রাজা”। নব্য অ্যাসিরীয় সম্রাজ্যকে উৎকর্ষের শিখরে নিয়ে যান তিনি। তিনি ছিলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নব্য অ্যাসিরীয় সম্রাট।
দীর্ঘস্থায়ী নানা রোগে ভুগে জীবনের শেষ প্রান্তে চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন তিনি। কবে বা কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছিলো, সে তথ্য আজও অজানা। তবে জীবনের শেষ পর্বে অজানা আশঙ্কায় দিনাতিপাত করলেও তার জীবনের শুরুটা ছিলো ভীষণ আড়ম্বরপূর্ণ।
খ্রিস্টপূর্ব ৬৮৫ সাল। সম্রাট এসারহাডনের ঘরে দ্বিতীয় ছেলে সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন আশুরবানীপাল। এসারহাডনের বড় ছেলে ও ভবিষ্যতের হবু নব্য অ্যাসিরীয় সম্রাট সিন-ইদ্দিলা-আপলার আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে পরবর্তী উত্তরাধিকারদের মধ্যে পারিবারিক গোলযোগ নিবৃত্ত করার উদ্দেশ্যে তিনি এক অভিনব উত্তরাধিকার চুক্তি করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই প্রথম এক ধরনের বর্ধননামা। তিনি করদ রাজ্যের সমস্ত প্রধানদের ডেকে তার অবর্তমানে ঐ বিশেষ চুক্তিটি বাস্তবায়নে সহায়তা করবার জন্য তাদেরকে শপথ গ্রহণ করিয়েছিলেন। চুক্তি অনুসারে ছোট ছেলে শামাস হবেন ব্যাবিলনের রাজা এবং আশুরবানীপাল পাবেন সম্রাটের দায়িত্ব।
এই সিদ্ধান্তের পরই শুরু হয় ভবিষ্যৎ সম্রাটের নিবিড় প্রশিক্ষণ। সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধি, সম্মুখ যুদ্ধ, তীর চালানো, ঘোড়ায় চড়া, চ্যারিয়ট চালনা প্রভৃতি বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলার জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রশিক্ষণ চলতে থাকে আশুরবানীপালের। সেই সাথে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকের মাধ্যমে ইতিহাস, সাহিত্য, সামরিক বিষয়, কূটনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার উপর জ্ঞান দানও চলতে থাকে। যোগ্য পুরোহিতরা তাকে সুমেরীয় ও আক্কাদীয় ভাষা লিখতে ও পড়তে যোগ্য করে তোলেন।
দাদী নাকিয়া জাকুতুর নির্দেশে তাকে রাষ্ট্রের অভিজাত ও রাজদরবারে রাজাদের সাথে উঠাবসার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা ও মানব সম্পর্ক অর্জনের সুযোগ করে দেয়া হয়। রাষ্ট্রের নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণে নিবিড় তত্ত্বাবধান ও উচ্চ পদে লোক নিয়োগের দায়িত্বও তাকে দেয়া হয়। বাবার বিশাল গুপ্তচর বাহিনীর সাথে কাজ করারও সুযোগ করে দেয়া হয় তাকে। এই বিশাল নেটওয়ার্কের মধ্যে থেকে সম্রাজ্যের রাজনীতি বোঝার ও শত্রুকে চেনার সক্ষমতা অর্জন করেছিলেন আশুরবানীপাল। রাষ্ট্রের সমস্ত কিছুই তার নখদর্পনে চলে এসেছিলো।
বিভিন্ন সময়ে রাজ্য জয়ের জন্য সামরিক অভিযানে বের হলে রাজ্য পরিচালনার বেশ কিছু দায়িত্ব আশুরবানীপালকেই দিয়ে যেতেন এসারহাডন। নিশ্চয়ই তার যোগ্যতার উপর ভরসা করেই এমন সিদ্ধান্ত তিনি নিতেন। বাবার অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রের খবরাখবর জানিয়ে পত্র পাঠাতেন আশুরবানীপাল। তেরো বছর বয়সে স্কুলে নিজের সাফল্য বর্ণনা করেও বাবার কাছে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। এ সব পত্র তার যোগ্যতা সম্পর্কে অত্যন্ত উচ্চ ধারণার জন্ম দেয়।
মিশরের অস্থিরতা ও বিদ্রোহ দমন করতে খ্রিস্টপূর্ব ৬৭১ সালে সামরিক অভিযানে যান এসারহাডন। এটিই ছিলো তার শেষ অভিযান। পথিমধ্যেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আগে থেকে করে রাখা চুক্তির কারণে এসারহাডনের মৃত্যুর পর ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৯ সালে সম্রাট হন আশুরবানীপাল।
বাবার অসমাপ্ত কাজ নিজ দায়িত্বে শেষ করেন তিনি। খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৪ সালে মিশরের থিবস জয় করে নেন এবং খ্রিস্টপূর্ব ৬৪৭ সালের মধ্যে ইরানের এলামীয় জনগোষ্ঠী ও ভাই শামাসের জোটবদ্ধ বিদ্রোহ দমন করে বাবিলন এবং সুসাও নিজের অধীনে নিয়ে আসেন আশুরবানীপাল।
প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তর সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রকে বিভিন্ন প্রদেশে ভাগ করে যোগ্য গভর্নর নির্বাচনের মাধ্যমে রাজ্য তদারকির দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সম্রাট ছিলেন তিনি। নপুংসকদের পারিবারিক উচ্চাকাঙ্খা কম থাকে বলে তাদেরকে আদর্শ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন সম্রাট আশুরবানীপাল। প্রচুর দেয়ালচিত্রে দাড়িবিহীন নিটল মুখের অধিকারী নপুংসকদেরকে আমরা দেখতে পেয়েছি।
তার প্রধান লক্ষ্য ছিলো রাজ্যের সীমানা সম্প্রসারণ করা। আর এ জন্য সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল ছিলেন তিনি। সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবনের উপর প্রচুর সম্পদ ব্যয় করেছেন তিনি। তিনি সবচেয়ে শক্তিশালী দল নিয়ে সামরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ পরিচালনা করতেন নিখুঁতভাবে। যুদ্ধ ও রাজনীতির ইতিহাসে বিশ্বের প্রথম সামরিক শক্তি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় আশুরবানীপালের অ্যাসিরীয়াকে।
সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আশুরবানীপাল সাম্রাজ্যের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ করেন। বহু অঞ্চল যুক্ত হয় তার সাম্রাজ্যে। প্রায় ৪০ বছর রাজত্ব করেন তিনি। তার সাম্রাজ্য ছিলো সমসাময়িক অন্যান্য সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচাইতে বড়, ভূমধ্যসাগর থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত ও মিশর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রাচীন পৃথিবীতে যে কয়টি সাম্রাজ্য বিস্তীর্ণ এলাকা শাসন করেছিলো, তাদের মধ্যে আশুরবানীপালের সাম্রাজ্য অন্যতম।
বিজিত রাজ্যের সম্পদ ও বিত্ত-বৈভবের মালিক হবার মাধ্যমে নব্য অ্যাসিরীয় অর্থনীতিকে ভীষণ চাঙ্গা করে তোলেন আশুরবানীপাল। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও দক্ষ ডাক-ব্যবস্থা তাকে রাষ্ট্রের দূর-দূরান্তের সাথে যোগাযোগ তৈরীতে সহায়তা করেছিলো।
আশুরবানীপালের শাসনকালে অ্যাসিরিয়ার রাজধানী নিনেভেহ ছিলো জাঁকজমকপূর্ণ এক বিশাল শহর। ধর্ম ও শিল্পকলার উন্নয়নে তিনি ব্যাপক উৎসাহ দিতেন। বিভিন্ন ট্যাবলেট থেকে জানা যায়, উপাসনালয়ের শ্রীবৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট খরচ করতেন তিনি। নব্য অ্যাসিরীয় দেবতা আশুরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সদা সচেষ্ট ছিলেন আশুরবানীপাল। বিজিত রাষ্ট্রগুলোর দেবতাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও তিনি সম্পদ ব্যয় করেছিলেন।
ধর্মের পাশাপাশি শিল্পের প্রতিও তার ছিলো ভীষণ আগ্রহ। রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোকে অমর করে রাখবার জন্য পাথরে খোদাই করে বেশ কয়েকটি রিলিফ ও ভাস্কর্য তৈরী করেন তিনি।
আশুরবানীপালের শিল্পীমনের দাবিদার রাজধানী নিনেভেহতে গড়ে তোলা ধবধবে একটি প্রাসাদ। এলেম ও ব্যাবিলন দখলের পর সেখান থেকে পাওয়া সম্পদ তাকে এই বিশাল প্রাসাদ তৈরী করতে সাহায্য করেছিলো। যুদ্ধবন্দীসহ শত শত শ্রমিক প্রাসাদ তৈরীর কাজে নিয়োজিত ছিলেন। দেবী ইশতারের কৃপা লাভের জন্যই হয়তো তার মন্দিরের পাশে বিশাল সেই প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন আশরবানীপাল। মাটি থেকে ২০ ফুট উঁচু প্ল্যাটফর্মের ওপর গড়ে উঠেছিলো প্রাসাদটি। তখনকার সময়ের অন্যান্য ভবনগুলোর মতো আশুরবানীপালের প্রাসাদটিও মাটি ও ইট দিয়ে তৈরী করা হয়। দুঃখের বিষয় হলো, সময়ের আবর্তে তা বিলীন হয়ে গিয়েছে। তবে সৌভাগ্যবশত পাথরের উপর খোদাই করা কিছু রিলিফ আজও টিকে রয়েছে বলে আশুরবানীপালের শৈল্পিক মন, তার জীবন, জ্ঞানের গভীরতা ও তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের অন্তঃর্দৃষ্টি উন্মোচিত হবার সুযোগ পেয়েছে।
নব্য অ্যাসিরীয় প্রাসাদগুলোকে খারাপ আত্মা থেকে দূরে রাখবার জন্য তৈরী করা হতো কিছু চমৎকার মূর্তি। তাদেরকে সুরক্ষা প্রদানকারী দেবতা হিসেবেই বিশ্বাস করতেন নব্য অ্যাসিরীয়রা। মূর্তিগুলোকে বলা হয় লামাসু। বিশাল আকারের ষাঁড়ের মতো দেহ, মানুষের মতো মাথা এবং ঈগলের মতো দুটো পাখাযুক্ত এই জীবের উপর আশুরবানীপালের দাদা সেনাকেরিব এবং দ্বিতীয় সার্গন প্রতিরক্ষার এই দায়িত্ব দিয়ে গেছেন বলে বিশ্বাস করা হতো।
ব্যাবিলন, এলাম, মিশর ও আরব উপজাতিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক অভিযানগুলোর বিজয়গাঁথা চিত্রিত করেন তিনি প্রাসাদটিতে। সক্রিয়ভাবে সৈন্যদের সাথে সবসময় তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে যান নি। তবে ঐ সমস্ত চিত্রের মাধ্যমে নিজেকে শক্তিশালী সামরিক নেতা হিসেবে প্রদর্শন করে নিজের যোগ্যতার গল্প বলার চেষ্টা তিনি সব সময় করতেন। সম্রাটের প্রাসাদে সবার প্রবেশের অধিকার না থাকলেও দেয়ালচিত্রগুলো ঠিকই সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন আশুরবানীপাল। নিজের সামরিক শক্তির প্রচারণা চালাতে গিয়ে তিনি তিল-তুবার যুদ্ধে পরাজিত রাজার কাটা মাথার ছবি খোদাই করে রেখেছিলেন। পরাজিত রাজার মাথাটি নিয়ে নিনেভেহের রাস্তায় প্যারেডও করিয়েছিলেন তিনি। এর মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেষ্টা করেছিলেন যে, নব্য অ্যাসিরীয় শক্তিকে প্রতিরোধ করার সাহস যে দেখাবে, তার পরিণতি কতো ভয়ংকর হবে। সিংহ শিকারের চিত্রটি ছিলো তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম।
সিংহ ছিলো তখনকার ইরাকের স্বস্থানীয় প্রাণী। সিংহ-হত্যা মানেই বোঝানো হতো, প্রকৃতির মধ্যকার অসমতাকে দূর করা। সিংহ শিকারের বিভিন্ন চিত্র পাথরে খোদাই করে নিজেকে তিনি সিংহ-বধকারী বলে পরিচিত করেছেন। সিংহ হত্যার চিত্রকে প্রতীক বানিয়ে তিনি এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন যে, নব্য অ্যাসিরীয় সম্রাট রাষ্ট্রের জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন এবং শুধুমাত্র সম্রাটই সিংহকে বধ করতে পারবেন। বিভিন্ন দেয়ালচিত্র থেকে মেলা তথ্য অনুসারে, সিংহ শিকারের এই দৃশ্য দেখার জন্য বহু মানুষের সমারোহ হতো এবং সম্রাটের জয়-জয়কারের মধ্য দিয়ে শেষ হতো খেলা।
পরাজিত রাজ্যের সুস্থ সবল ও দক্ষ জনগোষ্ঠীকে সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত করে সামরিক ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলেন তিনি। একটি অঞ্চল জয় করার পর পরাজিত জনগোষ্ঠীকে তাদের মাতৃভূমি থেকে সরিয়ে সাম্রাজ্যের অন্য অঞ্চলে স্থানান্তরিত করে বিনামূল্যে তাদের শ্রমকে কাজে লাগিয়ে সম্রাজ্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটান তিনি। স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়া খুবই শক্তিশালী ছিলো। এর ফলে মানুষের মনোবল চূর্ণ হয়ে যেতো এবং ভবিষ্যতে বিদ্রোহ করার মতো শক্তি তাদের মধ্যে আর অবশিষ্ট থাকতো না।
পরাজিত বন্দীদের কারো কারো ভাগ্যে লেখা হতো মৃত্যুদন্ড। এছাড়াও তাদের নির্মম শাস্তির গল্প আমাদেরকে হতবিহ্বল করে দেয়। কারো জিহ্বা কেটে দেয়া হতো, কাউকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো। আবার অনেক সময় মনস্তাত্ত্বিক শাস্তি হিসেবে বন্দীদের মৃত বাবা-মার হাড় গুঁড়ো করতে বাধ্য করা হতো। বিদ্রোহী রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে অনেক সময় নব্য অ্যাসিরীয় রাজধানী নিনেভেহের দরজার বাইরে কুকুরের মতো বেঁধে রেখে চরমভাবে অপমান করতেন আশুরবানীপাল। আশুরবানীপাল পরাজিত রাজ্য লুন্ঠন বা অগ্নিসংযোগ করেই শান্ত হতেন না, জমিতে লবণ ছিটিয়ে জমির উর্বরতাও নষ্ট করে দিতেন।
জ্ঞান সংরক্ষণের প্রতিও ছিলো তার তীব্র ইচ্ছা। এ জন্য তিনি একটি লাইব্রেরিও প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা ছিলো বিশ্বের প্রথম সুসংগঠিত লাইব্রেরি। কিউনিফর্ম ট্যাবলেটগুলোতে সংরক্ষণ করা হতো প্রতিটি ইতিহাস। শুধু তা-ই নয়, ক্যাটালগ করে সাজিয়ে রাখা হতো সেগুলোকে। অধিকাংশ বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসগুলো আশুরবানীপালের এই লাইব্রেরির বদৌলতেই আমরা জানতে পেরেছি।
আশুরবানীপালের সমসাময়িক অন্য সম্রাটদের লিখার বা পাঠ করার তেমন কোনো দক্ষতা ছিলো না। আর তাই এ নিয়ে খুবই গর্ববোধ করতেন আশুরবানীপাল। গর্ব করার মতোই তো ব্যাপার। এই অক্ষরজ্ঞানই ছিলো আশুরবানীপালের বিশেষত্ব, তার সবচেয়ে বড় শক্তি। আর এই শিক্ষা অর্জনে তার সবচেয়ে বড় সহযোগী ছিলেন দাদী নাকিয়া জাকুতু। নিঃসন্দেহে শত্রুর প্রতি চরম নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন আশুরবানীপাল। কিন্তু তার জ্ঞান অন্বেষণের ধারা সমস্ত নেতিবাচক দিকগুলোকে ছাপিয়ে যায়। এই যুক্তিতেই আমাদের উচিৎ তার অবদানগুলোকে মনে রাখা।
চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অহংকারী ও চরমভাবে সফল সম্রাট আশুরবানীপাল জীবনের শেষ অধ্যায়ে যে পরিণতি বরণ করেছেন, তা কোনোভাবেই তার ক্ষেত্রে কাম্য নয়। বহু রাজ্যজয়ী জ্ঞানী এই সম্রাট নিজেও হয়তো কোনো দিন ভাবেন নি, তার শেষ দিনগুলো এতো বেদনাবিধুর হবে। তবে কি সত্যিই মানুষের অন্তিম মুহূর্তে ঈশ্বর সুবিচার করেন? নাকি এর মাধ্যমে ঈশ্বর তাকে উপলব্ধি করাতে চেয়েছেন যে, প্রতাপশালী আশুরবানীপালও একজন সাধারণ মানুষ বৈ কিছুই নন?
রেফারেন্স: