দেবী লক্ষ্মী বা শ্রী হিন্দুধর্মাবলম্বীদের একজন প্রধান দেবী। তিনি ধন-সম্পদ, ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য, সৌন্দর্য, প্রেম ও সমৃদ্ধির দেবী। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে তাঁর গুরুত্ব অনেক।তাই সারাবছর বিভিন্ন সময়ই দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয়। বাঙালি হিন্দু পরিবারে প্রতি বৃহস্পতিবারে দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয়। প্রাচীন ভারতেও যে লক্ষ্মী একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেবী ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রাচীন মুদ্রায়। খ্রিস্টপূর্ব সময়ে মৌর্যযুগ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে গুপ্তযুগের মুদ্রায় এবং এর পরবর্তীতেও ভারতের বিভিন্ন রাজবংশের মুদ্রায় বিভিন্ন রূপে দেবী লক্ষ্মীর প্রতিকৃতি পাওয়া যায়। সাধারণত ধন-সম্পদের দেবী এবং ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসেবেই মুদ্রায় লক্ষ্মী দেবীর ছবি অঙ্কিত থাকত।
এসব মুদ্রা বিভিন্ন হিন্দু, বৌদ্ধ বা জৈন রাজাদের আমলের। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হল একজন মুসলিম শাসকের মুদ্রায়ও দেবী লক্ষ্মীর প্রতিকৃতি পাওয়া যায়। তিনি আর কেউ নন, সুলতান মোহাম্মদ ইবনে সাম, যিনি ‘মোহাম্মদ ঘুরি’ নামে বহুল পরিচিত। তিনি আফগানিস্তানের ‘ঘুরি সাম্রাজ্য’ এর সুলতান ছিলেন। তিনি উত্তর ভারত আক্রমণ করেন এবং ১১৯২ সালে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে চৌহান বংশীয় রাজা পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করে দিল্লী এবং উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা জয় করে নেন এবং ভারতে মুসলিম শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেন।
তিনি সিংহাসনে বসার পর তিনি নিজের নামে ‘লক্ষ্মী দেবী’র প্রতিকৃতি সম্বলিত স্বর্ণমুদ্রা প্রচলন করেন। এ মুদ্রার এক পাশে নাগরী লিপিতে তাঁর নাম লিখা ছিল এবং অন্য পাশে দেবী লক্ষ্মীর প্রতিকৃতি। মুদ্রায় তাঁর নাম লিখা ছিল ‘শ্রীমদ মোহাম্মদ ইবনে সাম’। আর লক্ষ্মী দেবী ছিলেন অন্যান্য প্রাচীন ভারতীয় মুদ্রায় যেমন দেখা যায় তেমন ‘sitting position’ এ বা ‘বসা অবস্থায়’ মোহাম্মদ ঘুরির এ মুদ্রার পৃথ্বীরাজ চৌহানের মুদ্রার সাথে অনেকটা মিল ছিল।
এর পিছনে অবশ্য কারণ ছিল। ঘুরি জানতেন মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা ও সাফল্য অনেকাংশে মুদ্রা দেখতে কেমন হয় তার উপর নির্ভর করতো। নতুন মুদ্রা যেন সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাই তিনি তাঁর পূর্ববর্তী রাজাদের আমলে প্রচলিত হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই প্রথা পরিবর্তন করতে চাননি। বহুবছরের প্রাচীন ভারতীয় রাজ পরম্পরাকে তিনিও গ্রহণ করে নেন। যে কারণে তাঁর প্রচলন করা নতুন মুদ্রায়ও দেবী লক্ষ্মী রয়ে যান ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসেবে।