রাতে লুকিয়ে মোমবাতি জ্বেলে লেখাপড়া শিখতেন বেগম রোকেয়া।
বেগম রোকেয়া ছিলেন বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি রক্ষণশীল পরিবারের মধ্যে বড় হয়েছেন এবং কঠোর সংগ্রাম করে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফার্সি ভাষা শিখে আজীবন সাহিত্যচর্চা ও নারীশিক্ষার জন্য কাজ করেছেন। ১৮৮০ সালে রংপুরে তার জন্ম। তাঁরা ছিলেন ৬ বোন-ভাই। পরিবারে ছিল কঠোর পর্দাপ্রথা। সেকালে মেয়েদের পড়াশোনা করাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হত , শুধু তাই নয় মেয়েরা অনাত্মীয়ের সামনে আসতে পারতো না। সেজন্য রোকেয়াও বাড়ির বাইরে পড়াশোনার সুযোগ পাননি। মায়ের সঙ্গে কলকাতায় থাকার সময়ে একজন মেম সাহেবার কাছে কিছুদিন লেখাপড়া করেন, কিন্তু সমাজ ও পরিবারের চাপে বেশিদিন তা করতে পারেন নি l দ্রুত তাও বন্ধ হয়ে যায়। তার বড়ো দুই ভাই ইব্রাহীম আবুল আসাদ ও খলিলুর রহমান কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন । তিনি বড়ো ভাই ইব্রাহীমের কাছে গোপনে লেখাপড়া শিখতেন। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ত, তখন তিনি মোমবাতির আলো জ্বেলে ইংরেজি ও বাংলা পড়তেন। পরবর্তীকালে রোকেয়া তাঁর ‘পদ্মরাগ’ উপন্যাসটি ভাই ইব্রাহীমের নামে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন- “দাদা! আমাকে তুমিই হাতে গড়িয়া তুলিয়াছ।” আর বাংলা শেখেন বড়ো বোন করিমুন্নেসার কাছে। তিনি বিধবা হয়ে চলে এসেছিলেন কলকাতায় এবং ছোট ছেলেকে ঘরেই লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা করেন। সেসময় রোকেয়াও ভাগ্নের সাথে বোনের কাছে পড়তে বসতেন। পরে রোকেয়ার বিয়ে হয়ে যায় বিহারের ভাগলপুরের সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। তিনি পেশায় ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং অনেক ভাষা জানতেন। স্বামীর উৎসাহে রোকেয়া বিভিন্ন সাহিত্য পড়া শুরু করেন এবং সাহিত্যচর্চাও শুরু করেন। অকালে স্বামী মারা গেলে রোকেয়া বড় একা হয়ে যান। কিন্তু তিনি দমে যাননি। নারীদের জন্য তিনি লেখা শুরু করেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি সাংগঠনিক কাজও করতে থাকেন। যেমন- মেয়েদের জন্য স্কুল তৈরি, মুসলিম মেয়েদের জন্য আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম সংগঠন ইত্যাদি। এই মহিয়সী নারী ১৯৩২ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এযুগেও তিনি আমাদের আলোকবর্তিকা।