দারাসবাড়ী। আমাদের পূর্ব পুরুষদের সৃষ্টি। সুলতানি আমলে অবিভক্ত বাংলার রাজধানী গৌড়ের তৈরী স্থাপত্য গুলোর মধ্যে দারাসবাড়ী মসজিদটি এক অপূর্ব সৃষ্টি এবং আকারের দিক দিয়ে ৩য় স্থান অধিকার করে আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ভারত – বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এই মসজিদটি অবস্থিত। ৫৪০ বৎসরের পুরোনো এই মসজিদটি স্থাপনকলা এখনও আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। আমরা মুগ্ধ হয়ে এর নির্মাণ শৈলী দেখি।
লাল ইট আর টেরাকোটার কাজ করা মসজিদটি বহুদিন মাটির নিচে চাপা পরে ছিল। কে, কবে তৈরী করেছিল জানা ছিল না। হঠাৎ করেই মুনশী এলাহী বক্স নামে একজন লোক একটি আরবি শিলালিপি খুঁজে পান। রহস্যের সমাধান হয়। ঐ শিলালিপি থেকে জানতে পারা যায় যে, ১৪৭৯ সালে সুলতান শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে তারই নির্দেশে মসজিদটি তৈরী করা হয়। তখন মসজিদটির নাম ছিল ফিরোজপুর।
১৫০২ সালে সুলতান হোসাইন শাহ যখন দারাসবাড়ী বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মাণ করেন তখন থেকে মসজিদটির নাম হয়ে যায় দারাসবাড়ী মসজিদ। মজার ব্যাপার হলো, মসজিদটির নাম অনুসারে এলাকাটিকেও সবাই দারাসবাড়ী বলে থাকে।
মসজিদটির নিখুঁত কারুকাজ করা মেহরাবগুলো চোখে পড়ার মতো। বহুদিন ব্যবহার না করার জন্য ধীরে ধীরে এর ছাদ ও বিশাল বারান্দাগুলো ধসে পরে গিয়েছে। আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে কতগুলো পিলার ও তাদের স্মৃতি।
মসজিদটির একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে একটি রয়েল গ্যালারি আছে। অনেকে এই রয়েল গ্যালারিকে মহিলাদের বসার স্থান ভেবে ভুল করে। আসলে এটি ছিল সুলতানদের বসার নির্দিষ্ট জায়গা, যেখানে তারা সিঁড়ি দিয়ে সরাসরি উঠে যেতে পারতেন।
বাংলা ও মুসলিম স্থাপত্যকলার সংমিশ্রণ এই দারাসবাড়ী মসজিদটি। বাংলায় যেহেতু পাথরের অভাব ছিল, সেই অভাব সুন্দরভাবে পূরণ করেছে অপূর্ব এই লাল টেরাকোটার নকশা।