২০১৬ সালে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গড় ধর্মপাল ইউনিয়নে পাল সম্রাট ধর্মপাল একটি দুর্গের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের সন্ধান পাওয়ার সংবাদে উৎসুক জনতা এক নজর দেখার জন্য অনেক দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে ভিড় করে। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই খনন কাজ পরিচালনা করেছিল। বলা হয়ে থাকে যে, প্রাচীন বাংলার অন্যতম পাল বংশের শাসক ধর্মপাল বাংলা সহ উত্তর ভারতের রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত হয়ে আছেন।

নবম শতকের শুরুতে বিতর্কিত ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের মূল নায়কও ছিলেন তিনি। গৌড়লেখমালায় প্রকাশিত ধর্মপালের খালিমপুর তাম্রলিপির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, পাল বংশের আবাস্থল ছিল বরেন্দ্রভূমি।

৬৩৭ সালে বাংলার স্বাধীন শাসক শশাঙ্কের মৃত্যুর পর শুরু হয় রাজ্য নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বড় বড় রাজারা ছোট ছোট রাজাদের পরাজিত করে সব দখল করে নিতে থাকে। প্রায় একশত বছর ধরে বাংলাই এই ঘোর অরাজকতা চলছিল। সেই সময় কোন স্থানে স্থায়ী কোনো শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেতে পারে নি। নিজেদের অভ্যন্তরীণ গোলযোগতো ছিলই, তদুপরি বিদেশীদের আক্রমণে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা আরো বেড়ে যায়। এই রূপ বাংলার বিশৃঙ্খলা অবস্থাকে কবি সন্ধাকর নন্দী “মাৎস্যন্যায়” বলে অভিহিত করেছেন।

মাৎস্যন্যায় -এর মানে হলো বড় মাছ ছোট মাছগুলোকে গোগ্রাসে গিলে খেয়ে ফেলে। আসলে এটির মধ্য দিয়ে সেইসময়কার রাজনৈতিক অরাজকতা অবস্থা বোঝানো হয়েছে। বাংলার এই বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা নির্মূল করেই রাজা গোপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন এবং পালবংশের প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে স্থায়ী কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পাল বংশের প্রথম রাজা গোপাল ৭৭০ সালে মৃত্যুবরণ করলে, তার সুযোগ্য ছেলে ধর্মপাল বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন ।

ধর্মপাল ছিলেন পাল বংশের দ্বিতীয় শাসক। পাল শাসকগণ ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি। এদের মাধ্যমেই বাংলাই বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে এবং অনুগামীদের সংখ্যা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় । ধর্মপাল বহু বৌদ্ধ মঠ, বিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন। তিনি বর্তমান নওগাঁর পাহাড়পুরে সোমপুরা নামক আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিহারের ভাগলপুরে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করেছিলেন। এগুলোই প্রাচীন ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়, যেগুলো পরবর্তী তিন/চারশো বছর ধরে বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও বাস্তুশাস্ত্র, আয়র্বেদ, জ্যোতিষশাস্ত্র ও আরো অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিত। এখানে পন্ডিত অতীশ দীপঙ্কর ও শাক্য শ্রীভদ্রও শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। জানা যায়, ধর্মপাল প্রায় ৫০ টি বড় বড় বৌদ্ধ বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন। প্রজা সাধারণের কল্যাণে কাজ করার পাশাপাশি তিনি রাজ্য বিজয়েও বিরাট ভূমিকা রাখেন। তার রাজনৈতিক কৌশলও ছিল চমৎকার।

ধর্মপালের সুদীর্ঘ ৪২ বছরের রাজত্বকালের (আনু. ৭৮১-৮২১ খ্রি.) সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ। ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের মাধ্যমে উত্তর ভারতের মধ্যদেশে আধিপত্য বিস্তারের জন্য দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট এবং মালব ও রাজস্থানের গুর্জর-প্রতীহারদের সঙ্গে বাংলার পালরা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই সময়ের উত্তর ভারতের মধ্যমণি কনৌজের দখল নিয়ে এই তিন শক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। কনৌজ পালপূর্ব যুগে বিখ্যাত শাসক হর্ষবর্ধনের শাসনাঞ্চল ছিল। রাজনৈতিক দিক থেকে এই অঞ্চলটি ভারতবর্ষের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সেকারণেই ধর্মপাল কনৌজ দখল করতে অভিযান চালান।

প্রথমে ৭৯০ সালে বাংলার পাল সম্রাট ধর্মপাল এবং প্রতীহার রাজা বৎসরাজের মধ্যে সংঘর্ষের মাধ্যমে ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধের শুরু হয়। এই যুদ্ধে বহু সৈন্য মারা যায়। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে বহু যুদ্ধের কাহিনী রয়েছে, তবে এরকম যুদ্ধ কেউ কখনো দেখেনি।  ধর্মপাল এবং প্রতীহার রাজা বৎসরাজের সেনাবাহিনীর মধ্যে যখন যুদ্ধ চলছে ঠিক সেইসময় আরেকটি তৃতীয় শক্তিপক্ষ যুদ্ধে হানা দেয়। এজন্যই এই যুদ্ধকে “ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ” বলা হয়। তবে, তিনদিকে তিনটি শক্তিশালী রাজবংশ আর মধ্যখানে দুর্বল আয়ুধ বংশও ছিল। ফলে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে চারটি পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। অবশ্য এটি নিয়ে অনেকটা বিতর্কও রয়েছে।

যুদ্ধের তৃতীয় শক্তিপক্ষটি ছিল উভয়েরই শক্র দাক্ষিণাত্যর রাষ্ট্রকূট রাজা ধ্রুবধারা বর্ষ। এই সংঘর্ষে রাজা ধ্রুবধারা বর্ষের হাতে অন্য দুই শক্তিই পরাজিত হয়েছিলেন। লোকশ্রুতি মতে, জলঢাকার গড় ধর্মপালে পাল সম্রাট ধর্মপালের যে দুর্গের সন্ধান পাওয়া গেছে, সেটি ঐ যুদ্ধের সময়কার ধর্মপালের  দুর্গ এবং যুদ্ধে ধর্মপাল পরাজিত হলে সে সময় থেকে নীলফামারীর ওই স্থানটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। পরবর্তীতে আবার ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে এবং ধর্মপাল কনৌজ দখল করেন । তবে, ধর্মপালের নাম অনুসারে জলঢাকার ঐ এলাকাটির নাম গড় ধর্মপাল হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে । সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে ধর্মপাল গড়ের দুর্গ প্রাচীরের অনেকটা দেখা যাচ্ছে। হয়তো আরো অনুসন্ধান করার মাধ্যমে সেইসময়কার অস্ত্র-শস্ত্র ও বিভিন্ন ব্যবহৃত জিনিসপত্র পাওয়া যাবে।

যাইহোক, পাল বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবেই ধর্মপালকে বলা হয়। তিনিই পাল বংশকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছিলেন। আর সেই শক্তির জোড়েই তিনি পুরো ভারতবর্ষ জয়ের স্বপ্ন দেখেন। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা জয়ের পর তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধের শুরুটা হয়েছিল মূলত ধর্মপালের হাত ধরেই। তিনি প্রথমে মগধ জয়ের পর দোয়াবের এলাহাবাদ পর্যন্ত গঙ্গা নদীর উপকূল ঘেঁষে এগিয়ে যেতে থাকেন। অপরদিকে প্রতীহার রাজা বাৎসরাজও মধ্যাঞ্চলে তার আধিপত্য বিস্তারে এগিয়ে আসেন এবং দোয়াব এলাকায় এসে বাধা প্রদান করেন রাজা ধর্মপালকে। দু’পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধে বহু সেনা নিহত হয় এবং শেষে ধর্মপাল পরাজিত হন । কিন্তু এ সময় দৃশ্যপটে অন্যদিক থেকে আগমন ঘটে রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুবধারাবর্ষের। তিনিও তখন বেরিয়েছেন উত্তরের দিকে তার সাম্রাজ্য বিস্তারে। এর ফলে তার মুখোমুখি হন প্রতীহার রাজা বাৎসরাজ! ধ্রুবধারাবর্ষ এগিয়ে এসে আক্রমণ করেন বাৎসরাজকে। ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধের শুরুটা হয়েছিল মূলত ধর্মপালের হাত ধরেই। তিনি প্রথমে মগধ জয়ের পর দোয়াবের এলাহাবাদ পর্যন্ত গঙ্গা নদীর উপকূল ঘেঁষে এগিয়ে যেতে থাকেন। অপরদিকে প্রতীহার রাজা বাৎসরাজও মধ্যাঞ্চলে তার আধিপত্য বিস্তারে এগিয়ে আসেন এবং দোয়াব এলাকায় এসে বাধা প্রদান করেন রাজা ধর্মপালকে। দু’পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধে বহু সেনা নিহত হয় এবং শেষে ধর্মপাল পরাজিত হন । কিন্তু এ সময় দৃশ্যপটে অন্যদিক থেকে আগমন ঘটে রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুবধারাবর্ষের। তিনিও তখন বেরিয়েছেন উত্তরের দিকে তার সাম্রাজ্য বিস্তারে। এর ফলে তার মুখোমুখি হন প্রতীহার রাজা বাৎসরাজ! ধ্রুবধারাবর্ষ এগিয়ে এসে আক্রমণ করেন বাৎসরাজকে। ওদিকে বাৎসরাজ ধর্মপালের সাথে যুদ্ধে অনেক সৈন্য হারিয়েছেন এবং রসদ শক্তিও ক্ষয় করেছেন। ফলে নতুন করে যুদ্ধের মুখে পড়ে ধ্রুবধারাবর্ষের নিকট তিনি পরাজিত হন। ধ্রুবধারাবর্ষ পরাজিত বাৎসরাজকে বিতাড়িত করেন রাজপুতনার মরু অঞ্চলের দিকে।

তারপর তিনি এগিয়ে আসেন বরেন্দ্রভূমির ধর্মপালের দিকে। গঙ্গা ও যমুনার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ধ্রুবধারাবর্ষ ও ধর্মপালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল সেই যুদ্ধ। ধর্মপালের সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও, ত্রিমুখি যুদ্ধে হেরে যান তিনি। অনেকের মতে, ধর্মপালের সেনাবাহিনীতে প্রায় ৩ লক্ষের মতো সেনাসদস্য ছিল।  কিন্তু ধ্রুবধারাবর্ষ এ যুদ্ধে জিতলেও, তার নিজ রাজ্য দাক্ষিণাত্যের নিরাপত্তার জন্য বিজিত অঞ্চলে আধিপত্য স্থায়ী করার কোনো ব্যবস্থা না করেই নিজ রাজ্যে ফেরত চলে যান। ত্রিপক্ষীয় এ যুদ্ধে বাৎসরাজ ও ধ্রুবধারাবর্ষ দুজনেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও ধর্মপাল ছিলেন মোটামুটি সুবিধাজনক অবস্থানে। কারণ কুশলী ভূমিকার জন্য যুদ্ধগুলোতে তার তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং হেরে গেলেও ভাগ্যক্রমে তিনিই কনৌজের ক্ষমতা পান।

ধর্মপাল কিছুদিনের মধ্যেই কনৌজরাজ ইন্দায়ুধকে পরাজিত করে ক্ষমতায় বসান তার অনুগত চক্রায়ুধকে। এর মাধ্যমে ধর্মপাল বাংলা, বিহারের সীমানা ছাড়িয়ে আধিপত্য বিস্তারে সমর্থ হন উত্তর ভারতীয় অঞ্চলে। সেখানে তিনি তার দরবারে বিরাট অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন, যেখানে ভোজ, মৎস্য, কুরু, যদু, যবন, অবন্তি, গান্ধার, কীর প্রভৃতি জনপথের রাজারা আমন্ত্রিত হয়ে আসেন এবং তার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এর ফলে তার অধিকার বর্তমান মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব ও পাকিস্তানের সিন্ধু নদ উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং বাংলা অঞ্চল হয়ে ওঠে সকলের কাছে ঈর্ষনীয় ব্যাপার।  ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের পর ভারতবর্ষের মধ্যাঞ্চলে ধর্মপালের প্রভাব ও ক্ষমতা তাকে বিখ্যাত শাসক হিসেবে পরিচিত করে তোলে। ধর্মপাল প্রায় চল্লিশ বছর ধরে শাসন ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। এসময়ে তিনি উত্তর ভারতের অবিসংবাদিত সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন।

 

তথ্যসূত্রঃ

দৈনিক জনকন্ঠ।

খালিমপুর তাম্রশাসন থেকে, গৌড়লেখমালা ।

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস, দেজ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৮ ।

 নীহাররঞ্জন রায়, বাঙ্গালীর ইতিহাস – আদি পর্ব, কলকাতা-৭৩, ২০০৮ ।

 Ramesh Chandra Majumder, History of Ancient Bengal, 1971।

 Abdul Momin Chowdhury, Dynastic history of Bengal, c. 750-1200 CE.।

 

শিউলি ফুলের বিষণ্ণতার গল্প

শরতের রাতের সৌন্দর্য বলতে যে ফুলকে বোঝানো হয়, তা হলো শিউলি ফুল। তবে এ সৌন্দর্য আনন্দের নয়, বেদনার প্রতীক। শিউলি ফুলের নাকি সব সময়ই মন খারাপ থাকে। সূর্যের ওপর তার এক রাশ অভিমান। তাই তো রাতের আঁধারেই নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করে সে এবং সূর্য ওঠার আগেই লুকিয়ে ঝরে পড়ে।...

মিশরীয় সিন্ডারেলা

মিশরে তখন ১৬ তম রাজবংশের যুগ। পার্সিয়ান আক্রমনের সম্ভাবনায় দিন গুণছে মিশর। সে সময় মিশরীয় সৈন্যদের তুলনায় গ্রীক সৈন্যদের কদর ছিলো অনেক বেশি। কারণ গ্রীক সৈন্যদের দক্ষতার গল্প প্রচলিত ছিলো বিশ্ব জুড়ে। এমন সময় ফারাও এপ্রিয়েজকে হত্যা করে মিশরের নতুন ফারাও হলেন রাজবংশের...

প্রাচীন সভ্যতায় ঈশ্বরের ধারণার উৎপত্তি ও সংখ্যাগত অবনমন

যে কোন সভ্যতার প্রাচীন ইতিহাস ঘাটলেই আমরা বহু ঈশ্বর বা গডের অস্তিত্বের কথা জানতে পারি। তবে আজকের প্রেক্ষাপটে ঈশ্বর সম্পর্কে এ ধারণা অনেকটাই পাল্টেছে। কেননা বর্তমান বিশ্বে বহু ধর্মমত এখনও বিদ্যমান থাকলেও ঈশ্বরের সংখ্যার বিষয়টি কমে এসেছে। একেশ্বরবাদ কিংবা বহুঈশ্বরবাদী...

হিন্দু দেব-দেবীর ধারণা প্রাচীন মধ্য এশীয় বিশ্বাসেরই প্রতিরূপ নয় তো?

সিংহবাহনের ওপর এক হাতে চাঁদ ও এক হাতে সূর্য নিয়ে চার হাতবিশিষ্ট এক দেবী যুদ্ধবাজ ভঙ্গিমায় আসীন নিজের সন্তানদের প্রতিরক্ষার জন্য। খুব পরিচিত লাগছে তাই না? নিশ্চয়ই দেবী দুর্গার সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছেন। কিন্তু এ তো দুর্গা নয়, ব্যাক্ট্রিয়ান মাতৃদেবী ‘নানায়াহ’ বা ‘ননা’...

মহাবীর কর্ণের অন্তিম যাত্রা

সূর্যদেব অস্তে চলে যাচ্ছেন। গোধূলিবেলার লালচে আলোতে আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি আমার এই জন্মের শত্রুকে। তার গান্ডিব ধরা উদ্ধত হাতে চকচক করছে অঞ্জলিক বাণ, যা আমার মস্তক ছেদ করার জন্য একটু পরেই ছুটে আসবে।পান্ডব বীর অর্জুন, যে আমার চরম শত্রু আবার আমার সহদর কনিষ্ঠ ভ্রাতা।ওই...

মেহেদী হাসান খান

মেহেদী হাসান খান ১৮ বছর বয়সের মেহেদী হাসান খান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হলেন,কিন্তু পড়াশোনায় তার মন নাই! কিন্তু কেন? তিনি নাওয়া- খাওয়া, পড়াশোনা বাদ দিয়ে একটা ছোট্ট কম্পিউটার সম্বল করে বাংলা ভাষায় লেখার জন্য লড়াই শুরু করলেন। একটাই জেদ, বাংলা...

ঢাকার হারিয়ে যাওয়া সংগ্রহশালা- বলধা জাদুঘর

১৯২৫ সালের ঢাকা; ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে বেরিয়ে রেললাইন ধরে নারায়ণগঞ্জের দিকে কিছুদূর এগুলে উয়ারি। উয়ারির শেষ সীমানায় এক সরু রাস্তা চলে দিয়েছে নারিন্দার দিকে। সরু সেই রাস্তার একপাশে বহু পুরাতন খ্রিস্টান কবরখানা আর তার বিপরীতে উঁচু পাচিলঘেরা কম্পাউন্ডের ভেতর দোতলা...

সুন্দরবন ধ্বংসের ইতিবৃত্ত

ব্রাজিলের চিরসবুজ বিস্তৃত এমাজন (Amazon Rainforest) গহীন বনাঞ্চলকে বলা হয় বিশ্বের ফুসফুস, তেমনি সুন্দরবনও বাংলাদেশের শ্বাস-প্রশ্বাসের এক অঙ্গ। এই ঘন বনাঞ্চল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও এক প্রতিরোধ। সুন্দরবনকে ঘিরে আশেপাশের জনপদে ছড়িয়ে আছে অনেক পৌরাণিক কাহিনী। এমনি...

ঢাকার এক বিস্মৃত চিকিৎসক

দিনটি ছিল ১৫ই নভেম্বর ১৮৬৪ সাল, মঙ্গলবার। সন্ধ্যা নামতে আর বেশি দেরি নেই। নারিন্দার খ্রিস্টান কবরস্থানের দীর্ঘ ঘাসের ঝোপে অবশ্য তখনই অন্ধকার নেমে এসেছে। সন্ধ্যা হলে এই এলাকায় সহজে কেউ পা বাড়ায় না। কিন্তু সেদিন পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য- আছে ইংরেজ, আরমেনিয়, দেশী সব...

ঢাকার ঐতিহাসিক তারা মসজিদ

পূর্বকথাঃ উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। আরমানিটোলার মহল্লা আলে আবু সাঈদে তখন এক প্রভাবশালী জমিদারের বাস, নাম- মীর্জা গোলাম পীর। দাদা মীর আবু সাঈদ  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রমরমা যুগে তুরস্ক থেকে এসে ঢাকায় থিতু হয়েছিলেন। মীর্জা গোলাম পীরের আরেক নাম মীর্জা আহমেদ জান। তবে...