অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

Portrait by Titian titled La Sultana Rossa, c. 1550, Wikipedia

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

Engraving by Johann Theodor de Bry, (1596)

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

16th century oil on wood painting of Hurrem Sultan

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

16th century Latin oil painting of Hurrem Sultan titled Rosa Solymanni Vxor (Rosa, Süleyman’s Wife)

অটোম্যান সাম্রাজ্যের নারীদের মধ্যে সব চাইতে জনপ্রিয়,  বিতর্কিত চরিত্র হচ্ছে হুররাম সুলতানা। ঐতিহাসিকরা তাকে কখনও কখনও প্রচন্ড লোভী, ক্ষমতালিপ্সু বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে হুররাম নিজের প্রয়োজনে যা খুশি তাই করেছেন। তার সম্পর্কে এই তথ্য সত্য নাকি মিথ্যা তা আমরা জানি না। চেষ্টা করছি তা খুঁজে দেখতে।

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

A portrait of Roxelana in the British Royal Collection, c. 1600–70. Wikipedia

সেই সময় বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই থাকতো। হেরে যাওয়া দেশগুলো থেকে তখন নারী এবং পুরুষদের বন্দি করে নিয়ে আসা হতো এবং দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হতো। সেইরকম এক দাসী ছিলেন হুররাম। হুররাম সুলতানার আসল নাম ছিল “রোক্সেলানা” । তার জন্ম পোল্যান্ডের ছোট একটি গ্রাম আলেকজান্দ্রা লিসোস্কায় এক অর্থোডক্স পাদ্রি পরিবারে। সেখান থেকে অটোম্যান সুলতানের ব্যাক্তিগত হারেমের জন্য তাকে কিনে আনা হয়। শুরু হয় তার  নতুন এক জীবন। হুররামকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসার পর সেখানে নিয়ম কানুন অনুসারে তাকে পড়ালেখা শিখতে হয়েছিল। হুররাম খুব হাসি খুশি মেয়ে ছিল বলে ফরাসি ভাষায় তার নাম দেয়া হয়েছিল “হরিম” যার অর্থ প্রফুল্ল।

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

Suleiman the Magnificent

সুলতান প্রথম সোলেয়মান ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের সবথেকে যোগ্য শাসক। তার বাবার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য পরিচালনার ভার তার উপর এসেই পরে। সুলতান হওয়ার সুবাদে তাকে প্রায়ই হারেমে যেতে হতো। আর তখনই তিনি দেখা পান হুররামের। ধীরে ধীরে সুলতান হুররামের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। আসলেই কি হুররাম অত্যন্ত সুন্দরী ছিল বলেই সুলতান তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন? নাকি অন্য কোন কারণও ছিল? আমরা ইন্টারনেট জগতের সুবিধার কারণে হুররামের যে সব ছবি দেখতে পাই তার থেকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে, হুররাম অতটাও সুন্দরী ছিলেন না। তার থেকে বেশি সুন্দরী তখন সেই হারেমে উপস্থিত ছিল। তবে কি ছিল হুররামের? হুররামের ছিল ভুবনভোলানো হাসি। তাছাড়াও অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং শিক্ষিত হওয়ার কারণে সুলতানের প্রিয় হতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি। এদিকে যতই সে সুলতানের মন জয় করছিলেন ততই হারেমে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাড়ছিল। আর হুররামের সব থেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সুলতান সোলেয়মান স্ত্রী, মাহিদেভরান। অটোম্যান সাম্রাজ্যের ২০০ বছরের নিয়ম ছিল হারেমে যে সকল উপপত্নীরা থাকতো তারা কেবল একটিমাত্র সন্তানের জন্ম দিতে পারবে। সন্তান জন্মের পর তাদেরকে অন্য প্রদেশে পাঠিয়ে দেয়া হতো এবং তাদের মধ্যে কারো সন্তান সিংহাসনে বসার আগে পর্যন্ত তারা সেই প্রদেশে ফিরে আসতে পারতো না। এই নিয়মটা পালনের পেছনে কারণ হলো, অটোম্যান সাম্রাজ্যের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, উত্তরাধিকার যুদ্ধে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ হয়েছে। এই যুদ্ধকে এড়ানোর জন্যই নিয়মটি পালন করা হতো। কিন্তু হুররামের বেলায় এসেই অটোম্যান সাম্রাজ্যের ২০০ বছরের এই নিয়ম পাল্টে গেলো। ধীরে ধীরে তিনি ক্রীতদাসী থেকে হয়ে উঠলেন সুলতানের স্ত্রী। হুররাম শুধু একটি সন্তানের জন্ম দেননি, ছয়টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন ছেলে ও একটি মেয়ে। প্রথম ছেলে সন্তান জন্মের পর সুলতান তাকে “হাসেকি সুলতান” উপাধি দেন, যার অর্থ “শাহজাদার মা”।

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

Roxelana and Süleyman the Magnificent by the German baroque painter Anton Hickel, (1780)

সুলতান সোলেয়মান হুররামকে কতটা ভালোবাসতেন তার প্রমান পাওয়া যায় তার লেখা কবিতাগুলো থেকে। সেই কবিতায় তিনি হুরররামের সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে আর হুররামের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করেননি। সুলতানের লেখা সেই কবিতাগুলোতে তিনি হুররামকে “মুহিবিবি” নামে ডাকতেন যার অর্থ “প্রিয়তমা” । কবিতাগুলো ছিল সুলতানের পক্ষ থেকে হুররামের প্রতি উপহার। হুররামও কিন্তু এই ব্যাপারে পিছিয়ে ছিলেন না। তাকে উদ্দেশ্য করে লিখা সুলতানের কবিতার প্রতিউত্তর তিনি কবিতার মাধ্যমেই দিতেন। আর সেই সকল কবিতাগুলো সুলতানকে নতুন উদ্দমে সামনে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করতো।

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

The Turkish bath (hamam) constructed by Hurrem Sultan, Istanbul, 1556

হুররাম প্রথম জীবনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন। পরবর্তীতে সুলতানের সাথে বিয়ের আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু বিয়ের পর হুররাম নিজেকে একজন “ক্রীতদাসী স্ত্রী” হিসেবে মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তিনি সুলতানের কাছে ক্রীতদাসী জীবন থেকে মুক্তি চান। সুলতান তার ব্যাপারটি বুঝতে পেরে তাকে ক্রীতদাসী জীবন থেকে মুক্তি দেন। স্ত্রীর পূর্ণ মর্যাদা ও নিজের বুদ্ধিমত্তার জোরে হুররাম প্রাসাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিতে পরিণত হয়ে ওঠেন। হারেমের সব দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। প্রাসাদের নিয়ম কানুন শিখতে থাকেন। এমনকি তুর্কি ভাষা, ব্যাকরণ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, সাহিত্য, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল, কূটনীত ইত্যাদি বিষয়ও তার আয়ত্বে চলে আসে। তার বুদ্ধির কারণেই পরবর্তিতে অটোম্যান ও পোল্যান্ডের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। । ধীরে ধীরে সুলতানের কাছে নিজেকে আরও যোগ্য করে তোলেন তিনি। কিছু কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, মাঝে মাঝে তিনি সুলতানের পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

Statue of Roxolana (Nastia Lisovska) in Rohatyn. Wikipedia

কিন্তু হুররামের এতো এতো গুনের মধ্যে একটি দোষ ইতিহাসের পাতায় ঘুরে বেড়ায়, আর তা হলো শাহজাদা মোস্তফাকে হত্যা। মোস্তফা ছিলেন সুলতান সোলেয়মান ও তার প্রথম স্ত্রী মাহিদেভরানের ছেলে। মোস্তফা তার দাদা প্রথম সেলিমের মতোই সুদর্শন এবং যোগ্য ছিলেন। তার সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সকলের মন জয় করতে বেশি সময় লাগেনি। একজন শাসক যতই যোগ্য ও সফল সুলতান হোক না কেনো, প্রজারা অনেক বছর একই সুলতানের শাসন আর মেনে নিতে চাচ্ছিলো না। আর তাই দীর্ঘ ৪৬ বছর সোলেয়মান যখন সুলতান হিসেবে শাসন করছিলেন, তখন সকলে শাহজাদা মোস্তফাকে সুলতানের আসনে দেখতে চেয়েছিলো। কিছু ঘনিষ্ঠ লোকজন শাহজাদা মোস্তফাকে এই ব্যাপারে উৎসাহিত করছিলো আর একটা সময় মোস্তফা নিজেও এমন কিছু আচরণ করা শুরু করলো যা দেখে মনে হয়েছে সেই সুলতান। মোস্তফার এই সকল আচরণ সুলতানকে তার বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সন্দেহাতীত করে তোলে। তাই তিনি দেরি না করে শাহজাদা মোস্তফাকে হত্যা করার আদেশ দেন। অনেক ঐতিহাসিক বলে থাকেন, হুররাম চেয়েছিলো তার সন্তানরা সিংহাসনে উত্তরাধিকারী হোক, তাই মোস্তফা সম্পর্কে নানা মিথ্যা কথা বলেন, যা সুলতানকে নিজ সন্তান হত্যা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু এই সম্পর্কে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। যদিও ধারণা করা হয়, এই সব ঘটনা হুররামের মনে কোন ছাপ ফেলতে পারেনি বরং তিনি খুশিই হয়েছিলেন। কারণ, মোস্তফা নিজেও মৃত্যুর আগে এটাই প্রমান করে গেছেন, তিনি সাহসী ঠিকই ছিলেন কিন্তু তার ভিতরে ধৈর্য্য ও সতর্কতার অনেক অভাব ছিল। কিন্তু ইতিহাস হুররামকেই তার সৎ ছেলের হত্যাকারী হিসেবেই আখ্যা দিয়ে আসছে। আসলেই কি মোস্তফা হত্যার পিছনে শুধুমাত্র হুররামই দায়ী? তখন এটাই নিয়ম ছিল, সিংহাসন পেতে হলে সমকক্ষদের হত্যা করতে হবে। হুররামও হয়তো তাই করেছিলেন। হুররামের পরিবর্তে সেই জায়গায় যদি শাহজাদা মোস্তফার মা মাহিদেভরান থাকতেন তবে তিনিও একই কাজ করতে দ্বিতীয়বার ভাবতেন না। সেইসময়ের কথা বিচার করলে এটা অন্যায় ছিল না। অটোম্যান সাম্রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য ও জনগণের ভালোর জন্য তারা নিজের প্রিয়জনদের হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেননি। আর সেই কারণেই শত শত বছর ধরে এই সাম্রাজ্য টিকে ছিল।

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

Letter of Hurrem Sultan to Sigismund II Augustus, congratulating him on his accession to the Polish throne in 1549. Wikipedia

মোস্তফার মৃত্যুর পর হুররামের ছেলে দ্বিতীয় সেলিম সিংহাসনে বসেন। এদিকে তার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর বড় ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য সে তার বাবাকেই দায়ী করেছিল। জাহাঙ্গীর মানসিক ও শারীরিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে মোস্তফার মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যে সেও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

18th century portrait of Hurrem Sultan kept at Topkapı Palace.

শেষ বয়সে হুররাম সুলতানা বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। মসজিদ, মাদ্রাসা থেকে শুরু করে মহিলাদের জন্য হাসপাতালও নির্মাণ করেছিলেন। দুস্থ ও অসহায়দের খাদ্যের অভাব মিটানোর জন্য “হাসেকি সুলতান ইমারেত” নামে একটি সরকারি সরাইখানাও প্রতিষ্ঠা করেন। হুররেম সুলতানা ১৫৫৮ সালে ১৫ই এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয় তার মৃত্যুর কারণ ছিল খাদ্যনালীতে আলসার। তাকে মার্বেলপাথর দিয়ে সাজানো সমাধিতে সমাধিত করা হয়। বলা হয়ে থাকে, তার হাস্যোজ্জ্বল স্মৃতিকে মনে রাখার জন্যেই তার সমাধি এভাবে তৈরী করা হয়েছিল। তার মৃত্যুতে সুলতান একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। যার প্রভাব তার রাজ্যের উপরেও পড়েছিল। দীর্ঘ ৮ বছর প্রিয়তমার কাছ থেকে দূরে থাকার পর ১৫৬৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর সুলতান সোলেয়মান দেহত্যাগ করেন। সুলতানকে তার প্রিয় স্ত্রী হুররামের পাশেই সমাহিত করা হয়। হুররাম বা সুলতান সোলেয়মান কেউ আজ বেঁচে নেই। কিন্তু আজও তাদের ভালোবাসার গল্প পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়। মানুষকে ভালোবাসার নতুন পথ দেখায়।

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

The türbe (mausoleum) of Hurrem Sultan at Süleymaniye Mosque in Fatih, Istanbul.

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচাইতে বিতর্কিত নারী চরিত্র: হুররাম সুলতানা, Stay Curioussis

Tomb of Sultan Suleiman the Magnificent

 

উর্বশি-পুরুরবাঃ স্বর্গের অপ্সরী ও মর্ত্যের মানুষের ভালোবাসার গল্প

ভারতীয় পুরাণের এক অমূল্য নিদর্শন হচ্ছে মহাভারত। প্রাচীন ও সুবিশাল এই মহাকাব্যটিকে গন্য করা হয় পৃথিবীর প্রাচীন চার বিখ্যাত মহাকাব্যের একটি হিসেবে। এই বিশাল  কাহিনি-কাব্যের পাতায় পাতায় আছে রাজনীতি, কূটনীতি, দর্শন, যুদ্ধ,ভালোবাসা, রাজাদের বীরত্বগাঁথা ইত্যাদি। বলা হয় যা...

নীল পূজার লোককাহিনী: নীলের ঘরে দিলাম বাতি

'নীলের ঘরে দিলাম বাতি      সাক্ষী থেকো মা ভগবতী।' বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। বছরজুড়ে উৎসবের শেষ নেই। আর গ্রামবাংলার লৌকিক উৎসব আর পার্বণ তো অগণ্য। বাঙালি হিন্দুদের তেমনি এক পার্বণ হলো নীলের পূজা। কালের চক্রে শহুরে হিন্দুসমাজে তেমন একটা প্রচলন আজকাল না থাকলেও...

কর্ণ, ভীষ্ম সংবাদ

রাত্রি দ্বিপ্রহর। চারিদিক নিস্তব্ধ, ভয়ংকর নিরবতায় আচ্ছন্ন। দূরথেকে কয়েকটা কুকুরের ডাক ভেসে আসছে। কুরুক্ষেত্রের বিশাল প্রান্তর এখন যেনো এক বিরান মরুভূমিতে পরিনত হয়েছে। হঠাৎ কৌরব শিবিরের একটি তাঁবু থেকে দীর্ঘকায়, সুঠামদেহী একটি ছায়ামূর্তি বের হয়ে এলো। পাহারারত প্রহরীরা...

ভয়ংকর শরভ অবতার

ভারতীয় পুরাণে উল্লিখিত দেবতা বিষ্ণুর দশ অবতারের কথা সর্বজনবিদিত। ধরায় যখন পাপাচার অনেক বেড়ে যায় তখন শিষ্ঠের পালন ও দুষ্টের দমনে  বিষ্ণু অবতার রূপ ধারন করেন।  কিন্তু পুরাণের আরেক প্রভাবশালী দেবতা মহাদেব শিবেরও বেশ কিছু অবতারের ব্যাপারে জানা যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য...

সত্যবতী ও বেদব্যাস

কৃষ্ণদৈপায়ন ব্যাসের রচিত মহাভারত এক অত্যাশ্চর্য এবং প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের সর্ব বৃহৎ গ্রন্থ। শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কালসীমা খ্রী. পূ. ৩০০০ অব্দের আশপাশে (যদিও মতান্তর আছে)। তার কিছুকাল পর মহাভারত রচিত হয়। মহাভারত গল্প যেকোনো আধুনিক গল্পের...

মেহেদী হাসান খান

মেহেদী হাসান খান ১৮ বছর বয়সের মেহেদী হাসান খান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হলেন,কিন্তু পড়াশোনায় তার মন নাই! কিন্তু কেন? তিনি নাওয়া- খাওয়া, পড়াশোনা বাদ দিয়ে একটা ছোট্ট কম্পিউটার সম্বল করে বাংলা ভাষায় লেখার জন্য লড়াই শুরু করলেন। একটাই জেদ, বাংলা...

ঢাকার হারিয়ে যাওয়া সংগ্রহশালা- বলধা জাদুঘর

১৯২৫ সালের ঢাকা; ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে বেরিয়ে রেললাইন ধরে নারায়ণগঞ্জের দিকে কিছুদূর এগুলে উয়ারি। উয়ারির শেষ সীমানায় এক সরু রাস্তা চলে দিয়েছে নারিন্দার দিকে। সরু সেই রাস্তার একপাশে বহু পুরাতন খ্রিস্টান কবরখানা আর তার বিপরীতে উঁচু পাচিলঘেরা কম্পাউন্ডের ভেতর দোতলা...

সুন্দরবন ধ্বংসের ইতিবৃত্ত

ব্রাজিলের চিরসবুজ বিস্তৃত এমাজন (Amazon Rainforest) গহীন বনাঞ্চলকে বলা হয় বিশ্বের ফুসফুস, তেমনি সুন্দরবনও বাংলাদেশের শ্বাস-প্রশ্বাসের এক অঙ্গ। এই ঘন বনাঞ্চল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও এক প্রতিরোধ। সুন্দরবনকে ঘিরে আশেপাশের জনপদে ছড়িয়ে আছে অনেক পৌরাণিক কাহিনী। এমনি...

ঢাকার এক বিস্মৃত চিকিৎসক

দিনটি ছিল ১৫ই নভেম্বর ১৮৬৪ সাল, মঙ্গলবার। সন্ধ্যা নামতে আর বেশি দেরি নেই। নারিন্দার খ্রিস্টান কবরস্থানের দীর্ঘ ঘাসের ঝোপে অবশ্য তখনই অন্ধকার নেমে এসেছে। সন্ধ্যা হলে এই এলাকায় সহজে কেউ পা বাড়ায় না। কিন্তু সেদিন পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য- আছে ইংরেজ, আরমেনিয়, দেশী সব...

ঢাকার ঐতিহাসিক তারা মসজিদ

পূর্বকথাঃ উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। আরমানিটোলার মহল্লা আলে আবু সাঈদে তখন এক প্রভাবশালী জমিদারের বাস, নাম- মীর্জা গোলাম পীর। দাদা মীর আবু সাঈদ  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রমরমা যুগে তুরস্ক থেকে এসে ঢাকায় থিতু হয়েছিলেন। মীর্জা গোলাম পীরের আরেক নাম মীর্জা আহমেদ জান। তবে...