ইনকা একটি প্রাচীন সভ্যতা! বর্তমান পেরুর কোস্কো এলাকায় একটি উপজাতি হিসেবে ইনকা সভ্যতার সূচনা হয়েছিলো।একদল ভাগ্যান্বেষী লোক পেরুর কুজকো উপত্যকায় এসে বসবাস শুরু করে।এরা ছিলো সংগঠিত। এদের মধ্যে ছিলো কৃষক শিকারী কারিগর কামার ও অন্য সব ধরনের দক্ষতা! এদের মধ্যেই তাপাক নামের এক সাহসী যোদ্ধা ১৩৯০ সালের দিকে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এটাই ইনকা রাজ্য।রাজা তাপাক নিজেকে “ভিরাকোচা ইনকা “অর্থাৎ জনগণের ঈশ্বর নামে ভূষিত করেন।এটি উন্নত সভ্যতায় দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল! এই আন্দীয় সভ্যতায় টাকার প্রচলন ছিল।ভোগ ও বিলাসিতা পন্যের বানিজ্য বিস্তৃতি লাভ করেছিল! স্পেনীয় বিজেতাদের হাতে ১৫৭২ খ্রীষ্টাব্দে ইনকাদের পতন ঘটে।কিন্তু তার আগে ১৪৩৮-১৫৩৩ সালের মধ্যে এই ইনকা সভ্যতা বিকাশের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়।

নানান দক্ষতায় এরা দক্ষিণ আমেরিকার এক বিশাল অংশকে নিজেদের শাসনাধীনে অবনত করতে সক্ষম হয়।তাদের শাসনাধীনে ছিলো বর্তমানের ইকুয়েডর বলিভিয়া আর্জেন্টিনা চিলি ও কলাম্বিয়া। এই সম্রাজ্য এতোটা বিশাল ছিলো যে ১৫৩৯ সাল নাগাদ তার আয়তন ছিলো ৯ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার! এই ভূখন্ডের বাসিন্দা ছিলো ২০০টিরও বেশি আলাদা আলাদা জাতি। এরা সবাই ইনকা রাজ্যের অধীন ছিলো।
ইনকাদের প্রথম সম্রাট মানকো কাপাক ১২০০ কুজকো নগরী প্রতিষ্ঠা করেন।১৪৩৮ সালে পচাকুটি ক্ষমতা লাভ করেন।তার সময়েই বিখ্যাত মাচুপিচু শহর প্রতিষ্ঠা হয়।এখানেই ইনকাদের শক্তিশালী দুর্গ প্রতিষ্ঠা হয়।পাচাকুটি সম্রাটের চেয়েও আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে বেশি মান্যতা পেতেন।এইভাবে পর্যন্তক্রমে ১৫৩২ সাল পর্যন্ত নানান রাজা ইনকা সভ্যতা কে বর্ধিত করেন।তবে ইনকা রাজাদের নানান আত্ন কলহের কারনে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে।তখন স্প্যানিশ লুটেরা আটাহ্রয়ালপাকে হত্যা করে পেরুর উপর আধিপত্য বিস্তার করেন।
 
ইনকারা মূলত: সূর্যের উপাসক ছিলো।কেচুয়া জাতির লোকেরা একসময় তাদের নেতাকে সূর্য পুত্র মনে করতো।তাদের সূর্য দেবতা ইনকার নামানুসারে ইনকা সভ্যতার নাম হয়।ইনকাদের পুরোহিত ও সেনাপ্রধানেরা তাদের দূরদুরান্তের অঞ্চল গুলো শাসন করতো। ইনকার আদিপুরুষ শিকারী ছিলো। ক্রমে এরা কৃষিজীবী হয়ে পড়ে।এরা সংগবদ্ধ ছিলো নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতো।কর প্রদান করতো।সামাজিক রীতিনীতি ছিলো সূদৃঢ়।তাদের পোশাকে পশুর চামড়া ব্যবহৃত হতো।তাদের স্থাপত্য কৌশলও ছিলো সুন্দর। কৃষি ভূমি জলনিষ্কাশন পয়োঃপ্রনালী সবই ছিলো আধুনিক। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ছিলো সড়কপথ।মালামাল বহনের জন্য যানবাহন ও রাস্তা ছিলো।নুড়ি পাথরের ব্যবহার বর্ষায় চলাচলকে স্বস্তি দায়ক করতো। এদের ধর্ম বিশ্বাস ছিলো প্রবল।তাদের দেবতার নাম ভিরাকোকা।ইনকারা এই দেবতাকে স্রষ্টা মনে করতো।তবে সূর্য দেবতা ইনতি ছিলো মর্যাদার দেবী।ইনতির সন্তান হিসেবে তারা নিজেকে ইনকা বলতো।
 
দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন এই সভ্যতার অজানা ইতিহাস হারিয়ে যাওয়া নগরী মাচুপিচু। হাজার বছরের এই পুরোনো সভ্যতার ইতিহাসে পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থান হচ্ছে ইনকাদের গড়ে তোলা এই মাচুপিচু শহর।১৪৫০ সালে ইনকারা এই সভ্যতা নির্মাণ করেন।এর ঠিক একশো বছর পর স্প্যানিশ দের আক্রমণে ইনকাদের সব শহর ধংস হয়ে যায় কিন্তু ইনকারা এই মাচুপিচু শহর খুঁজে পায়নি।আর মানুষজন না থাকার কারণে এটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।দীর্ঘ ৪০০বছর পর ১৯১১ সালে হিরাম বিংহাম নামের এক মার্কিন নাগরিক এই শহরটি আবিষ্কার করেন।আর তা দেখে পৃথিবী চমকে উঠে।মেঘের অনেক উপরে এই শহরের অবস্থান। নিচ থেকে এই শহরের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায়না।মাচুপিচুর স্থাপত্যশৈলী অদ্ভুত, পাথরের তৈরী মজকবুতর কাঠামোর উপর এটি দাঁড়ানো।এত উপরে এত মজকবুতর কাঠামো নির্মাণ সহজ কাজ নয়।পাহাড়ের চূঁড়া থেকে খাড়া ছয়শো মিটার নীচে উরুবাম্বা নদীতে গিয়ে মিশেছে।শহরটি প্রাকৃতিক ভাবেই নিরাপদ! শহরটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এতো বছর আগে এতো উঁচুতে কোন আধুনিক যন্ত্র‌ পাতি ছাড়া এটি তৈরি? সে এক বিষ্ময়। নিরাপত্তার কারনে এটি দুর্গ নগরী হিসেবে পরিচিত ছিলো।
ইনকা সভ্যতা আর মাচুপিচু শহর পৃথিবী বিখ্যাত প্রাচীন আর বহুলালোচিত সভ্যতা। যা মেঘের দেশে অবস্থিত এক প্রাচীন স্থাপত্য। এক অসাধারণ সভ্যতা।