ইতালির নবজাগরণের একটা মূল কারণ মেদিচি পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা। ব্যাবসায় ধনী হয়েছিল এই পরিবার। ফ্লোরেন্সে মেদিচি পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতাতে শিল্পে বিপ্লব এসেছিল। এই শিল্প বিপ্লবকেই বলা হয় নবজাগরণ – ইতালিয় ভাষায় যা ‘Renascimento‘ I

কসিমো মেদিচি (Cosimo Medici) মেদিচি ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন ও নানান ব্যাবসার দৌলতে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন । ফ্লোরেন্সে তৈরী করালেন বিশাল সুরম্য প্রাসাদ যার নাম ‘Medici Palazzo ‘I এছাড়াও তৈরী হলো তার ব্যাক্তিগত চ্যাপেল। ওটাই ইউরোপের প্রথম ব্যাক্তিগত চ্যাপেল। আর সেই চ্যাপেলের জন্যে ছবি আঁকতে ডাক পড়লো ফ্রা লিপ্পো লিপ্পির (Fra Lippo Lippi)। উনি একজন পাদ্রী হলেও ছবির হাতটি ছিল অসাধারণ।

ছবির মডেল হওয়ার জন্যে ফ্রা লিপ্পো লিপ্পি একজন নান বা সন্ন্যাসিনীকে রাজি করালেন। নাম লুক্রেজিয়া বুটি (Lucrezia Buti)। ফ্রা লিপ্পো লিপ্পির বয়স তখন প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি আর লুক্রেজিয়ার বয়স প্রায় কুড়ি। ছবি আঁকতে আঁকতেই প্রেম এবং পলায়ন করে বিবাহ। কিন্তু ব্যাপারটা এতো সহজ ছিলনা। চরম কেচ্ছার পর্যায়ে গেল ঘটনাটি। পঞ্চদশ শতাব্দীর ইউরোপের রক্ষণশীল সমাজ সন্ন্যাসীর এই চূড়ান্ত পদস্খলন সহজ ভাবে মেনে নেয়নি। ছবিটির নাম হয় “Adoration in the Forest “I ফ্রা লিপ্পো লিপ্পি অসাধারণ কিন্তু কলঙ্কিত শিল্পী হিসাবে পরিগণিত হলেন।

যায়হোক ছবি তো শেষ হল। আর ফ্লোরেন্সে মেদিচি পরিবারের গির্জায় স্থানও পেল। এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীতে এডওয়ার্ড সলি (Edward Solly) নামে বার্লিনের এক ব্যাবসায়ী মাত্র কয়েক পাউন্ড দিয়ে ছবিটি কিনে নেন ফ্লোরেন্সের এক পরিবারের থেকে। এডওয়ার্ড সলি প্রায় ৩০০০ নবজাগরণের ছবি জোগাড় করেছিলেন। কিছু কারণে বাধ্য হয়েই সেসব ছবি বিক্রি করে দিলেন প্রাশিয়া সরকারের কাছে। সারা ইউরোপে এই খবর ছড়িয়ে পড়ল। ফ্রা লিপ্পো লিপ্পির ছবি দেখে মুগ্ধ ইউরোপ। ইংল্যান্ডে তখন ভিক্টোরিয়ান যুগ (Victorian Age in England)। শুরু হল শিল্পীর নতুন করে মূল্যায়ন। শিল্পের উদ্দেশ্য নিয়েই রবার্ট ব্রাউনিং (Robert Browning)প্রশ্ন রাখলেন তাঁর কবিতা ফ্রা লিপ্পো লিপ্পিতে(Robert Browning’s ‘Fra Lippo Lippi’) । শিল্পের উদ্দেশ্য কি মনরঞ্জন না শিক্ষা প্রদান করা এই নিয়েই উঠল প্রশ্ন। শিল্পের বিরুদ্ধে যে ফতোয়া আজও প্রাসঙ্গিক তা ব্রাউনিংয়ের কবিতায় সেদিনও প্রতিধ্বনিত হয়েছিল –

But lift them over it, ignore it all,
Make them forget there’s such a thing as flesh.
Your business is to paint the souls of men—

(Robert Browning’s ‘Fra Lippo Lippi’ )

একসময় সেই ছবি গিয়ে পড়ল নাৎসীদের (Nazi) হাতে। অনেক চেষ্টা করেও নাৎসী সরকার তা বাঁচাতে পারল না। সেই সব ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে মার্কিন সেনাদের হস্তগত হল। মার্কিন প্রশাসন আদেশ দিল সব ছবি আমেরিকাতে নিয়ে যেতে হবে। আর এই আদেশ মানতে চায়নি মার্কিন সেনাবাহিনী। হ্যাঁ , ওই একবারই মার্কিন সেনাবাহিনী অবাধ্য হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় । তাদের যুক্তি ছিল জার্মানিকে আমরা লুঠের জন্যে শাস্তি দিচ্ছি অথচ আমরাও তো তাই করছি।

কিন্তু তাও ছবিগুলো নিয়ে যাওয়া হয় ওয়াসিংটনে। প্রবল জন অসন্তোষে ছবিগুলো প্রদর্শন করা বন্ধ হয়। মার্কিন সরকার সিদ্ধান্ত নেন ছবিগুলোকে জার্মানিতে ফেরৎ পাঠানো হবে। কিন্তু তার আগে এক বিশাল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ছবিগুলো দেখতে উপচে পরে জনতার ভিড়। এরপর ছবি ফেরৎ আসে জার্মানিতে।

The Mystical Nativity or Adoration in the Forest was painted by Fra Filippo Lippi . Picture Courtesy: Wikimedia Commons