আপনার বস যদি আপনার কাজের ভুলই না ধরল তা হলে তার আর কৃতিত্ব কি থাকল ? সব কিছু ঠিক হলেও একটু খুঁত যে বেরোবেই- তা নিশ্চিত থাকতে পারেন।

আমাদের পাঠশালার হাবুল মাস্টার গর্ব করে বলতেন ,”তোরা যাই লিখিসনা কেন আমি ঠিক একশটা ভুল বার করে দেব।” একবার মাস্টারমশাই আমাদের সৃজনশীলতা পরীক্ষা করবার নিমিত্তে স্বরচিত কবিতা লিখে আনতে বললেন। গোটা ক্লাসে ভোলা ছাড়া কারো ছড়া চার লাইনের বেশি এগোয়নি। ভোলা ছিল আমার মতো TTP I একমাত্র ওর কবিতাটাই কবিতা বলা চলে। স্যার বেশ সময় নিলেন ওটা দেখতে।

ডাক পড়ল ভোলার। আমরা আড়চোখে দেখলাম ব্যাকরণে ,অকারণে ভোলার খাতা তখন হলদিঘাটির ময়দান হয়ে গেছে। ভোলা এগোতেই স্যার বাঁজখানী গলাতে বললেন , “এটা কি হয়েছে ভোলা ? সাহিত্য পড় , রবি ঠাকুর পড় এসব কত বলেছি I তা তুই একি করলি ? ব্যাকরণকে একেবারে অনাথ করে দিয়েছিস দেখছি। এসব বদ সাহিত্য পড়ার ফল। কে শেখাল এসব তোকে ?”

ভোলা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল , “স্যার , রবি ঠাকুর। “

“কি বলতে চাও ? ফাজলামি করছো? “

“না স্যার। কি লিখব কিছুই বুঝতে না পেরে ওনারই একটা কবিতা টুকে দিয়েছিলাম। “

স্যারের মুখটা তখন ঠিক বর্ণনা করা যাবে না। ওটা স্বকীয় কল্পনার দায়িত্ব অর্পণ করলাম।

অবশ্য পরের গল্পটা এর থেকেও সাংঘাতিক। স্বয়ং মাইকেল এঞ্জেলোর বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘ডেভিডের’ ভুল ধরেছিলেন এক সামান্য পাদ্রী।

Self portrait of Michelangelo di Lodovico Buonarroti Simoni known best as simply Michelangelo.

১৫০১ সালে মাইকেল এঞ্জেলো রোম থেকে পুনরায় ফ্লোরেন্সে ফিরে এসেছেন। এতদিনে তিনি বেশ বিখ্যাত হয়েছেন আর হাতেও বেশ অনেক গুলো কাজ। এঞ্জেলো ডনি নামক এক ধনী ব্যাবসায়ী তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তার বিয়ের জন্যে একটা ছবি এঁকে দিতে হবে। মাইকেল এঞ্জেলো দর হাঁকলেন ৭০ ডুকাট্। সেই ব্যাবসায়ী চমকে গেলেন। বললেন এতো ? মাইকেল এঞ্জেলো এবার বিরক্ত হয়ে বললেন – না ভুল হয়েছে। একশ চল্লিশ ডুকাট্। তাতেই রাজি। আর কথা বাড়াতে সাহস পেলেন না ব্যাবসায়ী। সেই ছবিটার নাম ডনি টন্ডো। ছবিটা বর্তমানে ফ্লোরেন্সের উফিজি গ্যালারিতে রক্ষিত।ছবিটি যীশুর পরিবারের এক অনুপম নিবেদন। মাইকেল এঞ্জেলোর এই ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে পিকাসোও বহুবার নিজের ছবির দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিতেন ।

Doni Tondo.

The Doni Tondo, sometimes called The Holy Family, is the only finished panel painting by the mature Michelangelo to survive. Now in the Uffizi in Florence, Italy, and still in its original frame, the painting was probably commissioned by Agnolo Doni to commemorate his marriage to Maddalena Strozzi, the daughter of a powerful Tuscan family. The painting is in the form of a tondo, or round frame, which is frequently associated during the Renaissance with domestic ideas.

Michelangelo’s David Galleria dell’Accademia, Florence,Italy

ফ্লোরেন্সের সান্তামারিয়া ডেল ফিওরে গীর্জার কর্মশালায় টাস্কানির কারারা খনি থেকে আনা এক বিশাল বড় মার্বেলের ব্লক প্রায় ৪০ বছর ধরে ধুলোয় পরে ছিল। ১৪৬৪ সালে এই ব্লকটি আনা হয় এই গীর্জার উপরে কোন ভাস্কর্য তৈরীর জন্য। অনেকেই এই ব্লক টি থেকে ভাস্কর্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। পাদ্রী পিয়েরো সোর্ডেরিনি চাইছিলেন কেউ একবার শেষ চেষ্টা করে দেখুক।

Michelangelo’s David Galleria dell’Accademia, Florence,Italy

মাইকেল এঞ্জেলো দায়িত্ব পেয়ে ভালো করে মাপজোপ শুরু করলেন। অনেকের চেষ্টার ফলে ব্লক টি এতো দিনে বিকৃত হয়ে গেছিল।

প্রথমে মাইকেল এঞ্জেলো ডেভিডের একটি ছোট্ট মোমের মূর্তি করলেন।তিনি মনে করতেন ভাস্কর্যের রূপটি যেকোন প্রস্তর খন্ডের মধ্যেই বর্তমান থাকে। এক জন ভাস্কর শুধু বাড়তি প্রস্তর খন্ড সরিয়ে সেই আসল রূপটি পরিস্ফুট করেন। তার জীবনীকার ভাসারি বলেছেন, “He carved forms from stone as if he were pulling figures from water l ” যাই হোক ডেভিড তৈরী হলো।

Michelangelo’s David Galleria dell’Accademia, Florence,Italy

পিয়েরো সোর্ডেরিনি এলেন সেটা উদ্বোধন করতে। এসে ভূয়সী প্রসংসা করলেন বটে তবে একটি খুঁতও পেলেন। ডেভিডের নাকটা নাকি বেশ ‘চওড়া’ হয়ে গিয়েছে । এটা বলাতেই মাইকেল এঞ্জেলো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন I তারপর বেশ কিছুক্ষন ছেনি দিয়ে ঠুকঠাক করতে লাগলেন। উপর থেকে খানিকটা মার্বেল পাথরের ধুলো এসে পড়লো। নেমে এসে এক গাল হেসে বললেন -“এবার দেখুন তো ? একটু দূরে গিয়ে দেখুন। ” আসলে মাইকেল এঞ্জেলো কিছুই করেননি। করার ভান করে ছিলেন। যে কোনো ভাস্কর্য একটু দূর থেকেই দেখতে হয়। খুব কাছ থেকে দেখলে ঠিক বোঝা যায়না।তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন।

Michelangelo’s David Galleria dell’Accademia, Florence,Italy

ডেভিডের উচ্চতা ছিল প্রায় ১৭ ফিট। ১৫০১ থেকে ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই মূর্তিটি প্রস্তুত করা হয় বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি গল্প অনুসারে। মূর্তি টিকে রাখা হয় পালাৎজো ভেচ্চিওর (Palazzo Vecchio) সামনে। অতঃপর ১৮৭৩ সালে মূর্তি টিকে নিয়ে যাওয়া হয় একাডেমিয়া গ্যালারিতে(Accademia Gallery) । ফ্লোরেন্সের অধিবাসীরা এই মূর্তিটির নাম দিয়েছিল “il Gigante “(The giant) যার অর্থ বিশাল দৈত্য।

ওনার বয়স তখন মাত্র ২৬ !

(ছবি নেট থেকে )

Source :
1. Giorgio Vasari, Lives of the Most Excellent Painters, Sculptors, and Architects.

2. Ascanio Condivi, Vita di Michelagnolo Buonarroti (Eng. trans)

3. Andrew Graham-Dixon, Michelangelo and the Sistine Chapel

■Names of the historical characters used here :
1.Piero Soderini, the Gonfalonier of the city of Florence.

2. Michelangelo di Lodovico Buonarroti Simoni (1475-1564)

3. Angelo Doni, a wealthy Florentine merchant.

◆Name of the Church used here: Santa Maria del Fiore, also known as Florence Cathedral.
●Name of the Painting mentioned here: ‘Doni Tondo’.