মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাসে প্রখ্যাত ফারাও রাজাদের মধ্যে তুতেন খামেন ছিলেন তুলনামুলকভাবে কম পরিচিত। তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন তার মমি আবিষ্কারের পর। ইজিপ্টের রাজা তুতেনখামেনের কথা শুনলেই মনে হয় এগুলো বাস্তব নয়, কোনো রূপকথার সমুদ্রে ডুব দিলাম। যার রয়েছে অজস্র রহস্য। তবে নেই কোনো রহস্যভেদের ঠিকানা।

মিশরে যে কয়েকজন ফারাও রাজত্ব করেছেন তাদের মাঝে কনিষ্ঠতম শাসক ছিলেন তুতানখামেন। কিশোর বয়সেই মিশরের সম্রাট হয়ে যাওয়া তুতানখামেন নিয়ে রহস্যের যেন কোনো সীমা-পরিসীমা নেই! তার বয়স যখন দশ বছর তখন তিনি রাজ্যের হাল ধরেন। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৩২ থেকে ১৩২৩ সাল পর্যন্ত ছিল তার রাজত্বকাল। নয় বছর রাজত্বে ছিলেন তিনি। নয় বছর সিংহাসন সামলানোর পর খ্রিস্টপূর্ব ১৩২৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তরুণ ফারাওয়ের। কিন্তু তার মৃত্যু নিয়ে রয়েছে ব্যাপক রহস্য। মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও বিজ্ঞানীরা উদ্ঘাটন করতে পারেননি।

তার মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদের রয়েছে নানা মত। কেউ বা বলেন তাকে খুন করা হয়েছে। কেউ মনে করেন তুতানখামেন সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিলেন। কারও মতে ম্যালেরিয়াতে তিনি মারা যান। আবার প্রত্নতত্ত্ববিদদের একাংশ বিশ্বাস করেন, ভারী কিছুতে চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন এই ফারাও। ১৯২২ সালে তুতানখামেনের মমি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় তার মৃত্যু নিয়ে গবেষণা। মমি আবিষ্কারের বেশ কিছুদিন পর একদল বিশেষজ্ঞ জানান যে, যে ছুরি দিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই ছুরিটি পাওয়া গেছে।

যদি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কোনো আশ্চর্যের কথা বলা হয়, সবার আগে সমাধি ক্ষেত্রটি কথাই বলতে হয়। ইতিহাস বলে প্রায় পাঁচ হাজার ছয়শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি টিকে আছে। তুতেনখামেনকেও এই উপায়ে সমাধিস্থ করা হয়েছে। তবে তার সমাধি কক্ষটি ২০শতক পর্যন্ত টিকে ছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত মমি আবিষ্কৃত হয়েছে তার প্রায় প্রত্যেকটিতেই চোর-ডাকাতদের হাত পড়েছিল। কিন্তু কিশোর ফারাও তুতেন খামেনের সমাধিটি ছিল অক্ষত। চোরেরা এই সমাধিতে প্রবেশ করলেও মমি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। ফলে তুতেন খামেনের মমি ও এর সঙ্গে যাবতীয় ধন-সম্পদ থেকে যায় অক্ষত।১৮৯১ সালের কথা। হাওয়ার্ড কার্টার নামক একজন অল্পবয়স্ক ইংলিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ মিশরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। মিসরের প্রাচীন স্থাপনা নিয়ে তার প্রচণ্ড আগ্রহ। কারণ স্থাপত্যশিল্পের এত প্রাচীন এবং সুসংবদ্ধ নমুনা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া অসম্ভব। বছরের পর বছর তিনি কাজ করে গেলেন। তার অদম্য শিল্পগুণকে কাজে লাগিয়ে রানী হাটসেপসুটের মন্দিরের দেয়ালের ছবিগুলোর নমুনা তৈরি করলেন প্রায় ছয় বছর ধরে।

মিসরে থাকাকালীন বছরগুলোতে তিনি তার প্রাপ্ত গবেষণা এবং অনুসন্ধান থেকে এটা অনুভব করছিলেন, কমপক্ষে একটি অনাবিষ্কৃত সমাধি এখনো মিসরে রয়েছে। আর তা হচ্ছে ফারাও রাজা তুতেন খামেনের সমাধি এবং তার ধারণাই সত্য হলো। নীলনদের পাশে থেবা পর্বতমালায় অবস্থিত কিংক উপত্যকা। সেখানে ৩ হাজার বছর আগে সমাধিস্থ করা হয়েছিল প্রায় ৪০ জন মিসরীয় ফারাওকে। আর ১৯২২ সালে সেখানে সর্বকালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্মত্বাত্তি্বক আবিষ্কার সংঘটিত হয়। এর আগে বহু বছর ধরে অনেক প্রত্মতত্ত্ববিদ ওই উপত্যকায় প্রচুর অনুসন্ধান চালিয়েছেন। জায়াগটি রীতিমতো চষে ফেলেছেন। তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা জন্মেছিল, সেখানে মূল্যবান আর কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তা সত্ত্বেও লর্ড কারনাভান নামের জনৈক উৎসাহী শখের প্রত্মতত্ত্ববদি কিংক প্রত্যকায় নতুন করে অনুসন্ধান কাজ চালাবেন বলে ঠিক করলেন। এ কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য তিনি এক প্রত্নতত্ত্ববিদ খননকারক নিযুক্ত করেন। ভদ্রলোকের নাম ছিল হাওয়ার্ড কার্টার। বেশ কয়েক বছর খনন কাজ চালিয়েও কার্টার কোনো কিছু আবিষ্কার করতে সক্ষম হলেন না। ১৯২২ সালের ৪ই নভেম্বর। সকাল বেলা। ফারাও রাজা চতুর্থ রামেশিসের সমাধিতে প্রায় দেড় লক্ষ টন পাথর অপসারণ করার পর নিচে পাথর কেটে তৈরি করা একটি সিঁড়ির সন্ধান পেলেন। খুঁড়তে খুঁড়তে তারা একই রকম আরও প্রায় ১৫টি সিঁড়ি ডিঙিয়ে শেষে একটি প্রাচীন এবং সিল করা দরজার সামনে এসে উপস্থিত হলেন। দরজার ওপর হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে বড় করে লেখা ছিল, ‘তুতেন খামেন’।

কারনাভান ও কার্টার সিঁড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলেন। খুলে ফেললেন দরজা। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আরেকটি দরজা তাদের চোখে পড়ল। দ্বিতীয় দরজাটি পরীক্ষা করে তাদের মনে হলো, অতীতে কোনো এক সময় সেটি একবার খোলা হয়েছিল। তারপর সেটাকে আরও সিল করে দেওয়া হয়। তাদের সন্দেহ হলো, সম্ভবত সেখানে একবার ডাকাতি। অনেক মূল্যবান দ্রব্যই হয়তো লুট হয়েছে। তবুও হতাশ হলেন না তারা। সমাধির মধ্যে, অর্থাৎ এন্টিচেম্বারের ভেতর তখনো যা কিছু ছিল, তা দিয়ে ফারাও তুতেন খামেন সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানা সম্ভব। এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত ছিলেন।

১৯২২ সালের ২৬ নভেম্বর কার্টার দ্বিতীয় দরজাটির গায়ে একটা ফুটো করে এন্টিচেম্বারটির ভেতরে কী আছে তা দেখার চেষ্টা করলেন। কী দেখলেন তিনি? দেখলেন সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো পালঙ্ক, সোনা-রুপার তৈরি একটি সিংহাসন, খাদ্য সংরক্ষণের অনেক বাক্স এবং আরও মূল্যবোন কিছু জিনিসপত্র। সব কিছুই অগোছালা ছিল। কিন্তু কেন? এর কি কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়? যায় বৈকি। যেমন_ অতীতে সম্ভবত সেখানে লুটতরাজের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু প্রহরীদের সঙ্গে লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে লুটেরারা পালিয়ে যায় এবং তারপর প্রহরীরা কোনোকিছু গোছগাছ না করেই দরজাটি সিল করে দেয়। পরবর্তী দুই মাস কার্টার এন্টিচেম্বারে রক্ষিত ওইসব মূল্যবান জিনিসপত্রের প্রচুর ছবি তুললেন। কিন্তু শুধু ছবি তুলেই কারনাভান ও কার্টার সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। বহু চেষ্টা করে ১৯২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তারা দরজাটি ভাঙতে সক্ষম হলেন। এন্টিচেম্বারে সোনার তৈরি একটি বড় বাক্স ছিল। তার ভেতর ছিল একই রকম অপেক্ষাকৃত ছোট আরও তিনটি বাক্স। চতুর্থ বাক্সটি ছিল মূলত হলুদ স্ফটিকমণির তৈরি একটি কফিন। কফিনটির ভেতরে একই রকম আরও তিনটি কফিন পাওয়া গেল। শেষ কফিনটি ছিল সোনার তৈরি এবং তার ওজন ছিল প্রায় ১৩৫ কিলোগ্রাম। চতুর্থ কফিনটির ডালা খুলে প্রত্নতত্ত্ববিদদ্বয় আবিষ্কার করলেন ফারাও তুতেন খামেনের মমিকৃত দেহ। মৃত ফারাওর মাথা ও কাঁধ ঢাকা ছিল একটি চমৎকার স্বর্ণের মুখোশে। তার বুকের উপর পড়ে ছিল কিছু শুকনো ফুল। এ ছাড়াও সম্পূর্ণ সমাধির আশপাশের বিভিন্ন কক্ষে পাওয়া গেল অসংখ্য মহামূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী, যার বেশির ভাগই ছিল স্বর্ণের। এসব সম্পত্তির পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, এক কথায় বলতে গেলে তুতেন খামেনের সমাধি আবিষ্কারের পর মানুষ রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ তুতেন খামেন ফারাও রাজাদের মধ্যে খুবই অল্পসময় রাজত্ব করেন এবং খুবই অপরিচিত ছিলেন। তার সমাধিতেই যদি এত ধন-সম্পত্তি পাওয়া যায়, তাহলে বড় সমাধিগুলোতে কত সম্পত্তি লুকানো ছিল?তুতেন খামুনের সমাধি আবিষ্কারের পর তার শরীর প্রায় তিনবার এক্সরে করা হয়েছিল। সর্বশেষ এক্সরের তথ্যমতে মিশর, ইতালি, সুইস এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বিশেষজ্ঞরা একমত প্রকাশ করেন যে, কোন কারণে তুতেন খামুনের বাম পা মারাত্মকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং সে পায়ের হাড়ে চিড় দেখা দেয়। ফলে খুবই অল্প সময়ে তুতেন খামুনের মৃত্যু ঘটে। সংক্ষেপে তুতেন খামেনের বাহ্যিক গঠনঃ
মাথা: সম্পূর্ণ মুন্ডিত।
চোখ: বিস্তৃত।
কান: ৭.৫ মিলিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র যুক্ত।
করোটি: সম্পূর্ণ খালি। (মস্তিষ্ক)
আক্কেল দাঁত: সামান্য উত্থিত।
উচ্চতা: ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি।
বয়স: প্রায় ১৮।
 
এখানেই শেষ নয়, মমি আবিষ্কারের পর থেকে একের পর এক রহস্যময় ঘটনা ঘটতে থাকে।
এর সঙ্গে জড়িত প্রায় প্রত্যেকেরই রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। সব নাকি তুতেন খামেনের মমির অভিশাপ। সারা বিশ্বেই এটি এখন তুতেন খামেনের অভিশাপ নামে পরিচিত। প্রাচীন মিসরের ফারাও তুতেন খামেনের অভিশাপে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। যারাই তার পিরামিডে ধন-সম্পদের লোভে গেছে তাদের জীবনে নেমে এসেছে অভিশাপের থাবা। ঘটেছে করুণ ঘটনা। এ এক রহস্য।
কারনাভানের অর্থায়নে হাওয়ার্ড কার্টারের মমি আবিষ্কারের পিছনে একটি হলুদ ক্যানারি পাখির অবদান ছিল। ইংরেজিতে ‘ক্যানারি’র একটি অপ্রচলিত অর্থ হলো গুপ্তচর। এ পাখিটি তাদের গুপ্তধন পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। আর মমির অভিশাপের বিষয়টিও তাই হলুদ ক্যানারি পাখিকে দিয়েই শুরু হলো। যেদিন অভিযাত্রী দল প্রথম তুতেন খামেনের মমি আবিষ্কার করল, সেদিনই শুরু হলো অদ্ভুত আর রহস্যময় কাণ্ড-কারখানা।
 
এবার আশা যাক অভিশাপের ব্যাপারে। মিশরের অনেকেই বিশ্বাস করেন, তুতানখামেন মমিকে যারা বিরক্ত করবে, তাদের মৃত্যু অনিবার্য । এই বিশ্বাসটা তৈরি হয়েছিল ১৯২২ সালে প্রথম তুতানখামেনের মমি আবিষ্কারের পর থেকে।মমি আবিষ্কারের নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হোয়ার্ড কার্টার ও জর্জ হার্বার্ট। এই আবিষ্কারের কয়েকদিন পরেই ঘটে সেই অভিশপ্তময় ঘটনা। জর্জ হার্বার্ট ও কার্টারের নেতৃত্বে যেসব কর্মী এই খননকার্যে যুক্ত ছিলেন, ঘটনাচক্রে তাদের মধ্যে ২১ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। এরপর থেকেই এঅঞ্চলের মানুষের মধ্যে অভিশাপের কাহিনীটি ছড়াতে থাকে।
 
ব্রিটিশ ধনকুবের লর্ড কারনারভনের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন হাওয়ার্ড।কিন্তু দীর্ঘ সন্ধানেও মিলল না কিছুই,। পেলেন না কিছুই। শেষে অনুসন্ধান বন্ধ করে দিতে বললেন লর্ড । হাওয়ার্ড পড়লেন মহা বিপদে। হাওয়ার্ড কাকুতি মিনতি করে এক বছর সময় চেয়ে নিলেন ।নতুন উদ্যমে মিশর ফিরে এলেন তিনি। একদিন নাকি এক ক্যানারি পাখি সঙ্গী হয় তাঁর। কী মনে হতে পাখির দেখানো পথে এগিয়ে যান হাওয়ার্ড । এক জায়গায় থেমে খনন চালাতে বলেন তিনি। শাবলের চাঙড়ে বালি আর মাটি সরতেই বেরিয়ে এল সিঁড়ির ধাপ। ফ্যারাও চতুর্থ রামেসিসের পিরামিডের ধ্বংসস্তূপে ঢাকা পড়েছিল এই সিঁড়ি। কিছুটা নেমেই বুঝলেন হাওয়ার্ড। এ বার ঠিক লক্ষ্যে এসেছেন তিনি।
 
খবর পাঠালেন লর্ডকে। ব্রিটেন থেকে তিনি এলেন মিশরে। তাঁর উপস্থিতিতে প্রবেশ করা হল মাটির গভীরে। কিছুদূর যাওয়ার পরে হাওয়ার্ড বুঝলেন এ পথে সুদূর অতীতে পা পড়লেও মূল প্রকোষ্ঠ অক্ষত। একসময় সুড়ঙ্গ পথ শেষ হল সেই মূল প্রকোষ্ঠে। যার প্রবেশদ্বারে লিপিবদ্ধ ফ্যারাও তুতানখামেনের নাম! ১৯২২-এর নভেম্বর মাসে একদিন সর্ব প্রথম বিংশ শতকের মানুষের পা পড়ল সেখানে।পাওয়া গেল তিনটি সোনার শবাধার । যার একটিতে শুয়েছিলেন কিশোর রাজা তুতানখামেন মামি হয়ে | কিন্তু যুগান্তকারী এই আবিষ্কারের সঙ্গে লেগে গেল অভিশাপের তকমা।সমাধিতে পা রাখার কয়েক মাসের মধ্যে রহস্যমৃত্যু হল লর্ড কারনারভনের । কোনও এক কীট নাকি কামড়েছিল তাঁর গালে | পরে সেই ক্ষতই সংক্রামিত হয়ে যায়। যখন তিনি কায়রোর হাসপাতালে মারা যান, গোটা কায়রো শহরে একসঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যায়। এবং লন্ডনে তখনও তাঁর সংবাদ এসে পৌঁছয়নি । যে সময় লর্ডের মৃত্যু হয়, ওই একই সময়ে লন্ডনে হঠাত্ চিৎকার করে ওঠে তাঁর পোষা কুকুর | তারপরেই স্তব্ধ হয়ে যায় পোষ্যটি ।
 
 
রহস্য এখানেই শেষ নয়। হাওয়ার্ডের সেই পোষা হলুদ ক্যানারি পাখিটিকে সাপ মেরে ফেলে। যে রেডিওলজিস্ট এক্স-রে করেছিলেন তুতানখামেনের মামির, তিনি রহস্যজনকভাবে মারা যান। এক ধনী মার্কিনী দেখতে গিয়েছিলেন তুতানখামেনের সমাধি, তিনি মারা যান নিউমোনিয়ায় । ১৯২২ সালে আবিষ্কার হওয়ার পরে ১৯২৯ সালের মধ্যে তুতানখামেনের সমাধি আবিষ্কার-অভিযানের সঙ্গে যুক্তদের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয় রহস্যময় কারণে । এভাবে একে একে বিভিন্ন সময় মোট ২১ জনের মৃত্যু ঘটে যারা জড়িত ছিলেন তুতানখামেনের মমির উদ্ধারকার্যে।সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হতে থাকে প্রাচীন মিশরীয় বচন, ‘ মৃত্যু তার কাছে ক্ষিপ্র ডানায় উড়ে আসে, যে ফ্যারাওয়ের শান্তি বিঘ্নিত করে । অনেকেরই বদ্ধমূল ধারনা হয়, তুতানখামেনের সমাধিতে এই বচন লেখা একটি ফলক ছিল, যা সরিয়ে রাখেন হাওয়ার্ড নিজে। যাতে কোনও গুজব না রটে ।কিন্তু যুক্তিবাদীরা এই অভিশাপের দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, তুতানখামেন যদি অভিশাপই দেবেন, তাহলে স্বয়ং আবিষ্কারক হাওয়ার্ড কার্টার রেহাই পেলেন কী করে ? তাঁর তো ৬৪ বছর বয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়। এক গবেষক দাবি করেন তুতানখামেনের অভিশাপ কোনো জাদু নয়, জীবাণু। যখন তারা কবরে ঢুকেছিল তখন হাজার বছর পুরানো জীবাণু যা অন্ধকারে ছিল তা আলো পেয়ে আবার জেগে উঠে। এসব জীবাণুর সংক্রমণেই ধীরে ধীরে মারা যায় তারা।
 
 
তুতানখামেনের মমি নিয়ে গবেষণা শেষ হয়ে যায় নি। ২০১৭ সালে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী আরও একবার ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ ” নিকোলাস রিভেস” এর তত্ত্ববধানে অভিযান চলবে তুতেনখামেনের সমাধির গোপন ডেরায়। দীর্ঘ ৩৩০০ বছর ধরে লুকিয়ে থাকা তুতানখামেনের সমাধির ভিতর লুকিয়ে থাকা চেম্বারের রহস্য ভেদ করতে তাঁদের এই অভিযান বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ নিকোলাস রিভেস। কী থাকতে পারে এই চেম্বারে? তুতানখামেনের সমাধি নিয়ে এত দিন ধরে নিকোলাস যে গবেষণা চালিয়েছেন, সেখানে সমাধির একটি গুপ্তপথের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন তিনি। এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি ৯০ শতাংশ নিশ্চিত, এবারে নতুন কিছু তথ্য হাতে পাবেনই। নিকোলাসের অনুমান তুতেনখামেনের সমাধিতে আরও দুটি গোপন কক্ষ রয়েছে। যার মধ্যে একটি হতে পারে রানি নেফাতিতির সমাধি! খ্রিস্টপূর্ব ১৩৫১ থেকে ১৩৩৪ সাল পর্যন্ত নেফাতিতি মিশরে রাজ করেছিলেন।তুতানখামেন সমাধির এ রহস্য ভেদ করতে নিকোলাসকে সাহায্য করবে ইতালির তুরিনের একটি পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি। এবং এর সঙ্গে থাকবে দু’বছর ধরে চালিয়ে যাওয়া অনুসন্ধানকারীর দলও। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এ গবেষণা কাজ পরিচালিত হবে বলে জানান তুরিনের পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসর ফ্রাঙ্কো পরসেলি। মাটির তলায় ৩২ ফুট গভীর পর্যন্ত স্ক্যান করতে পারবে এমন শক্তিশালী রাডার সিস্টেম ব্যবহার করা হবে বলে তিনি জানান। এই রাডারের তরঙ্গায়িত হওয়ার ক্ষমতা ২০০ মেগা হার্টজ থেকে ২ গিগা হার্টজ পর্যন্ত।
 
 
তবে নীল নদের বাসিন্দাদের অনেকের মনে চিন্তা এখন একটাই। যাঁরা বিশ্বাস করেন এই সমাধিতে ঢোকার চেষ্টা করার ফল কখনও ভাল হয়না, তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, তুতানখামেনের সমাধিতে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে ফের ১৯২২ সালের মতো কোনও বিভীষিকা ফিরে আসবে না তো! নতুন করে অভিশাপের ছায়া পড়বে না তো মিশরবাসীদের উপর! বিজ্ঞানমনস্ক চোখ এ সব উড়িয়ে দিলেও, মানুষের বিশ্বাসকে কি অত সহজে টলানো যায়!(লেখা তথ্য সুত্র থেকে নেওয়া)
 
তথ্য সুত্রঃ neonaloy.tutankhamun
bigganbortika/tutankhamun-curse/
wikipedia.Tutankhamun
Grim secrets of Pharaoh’s city BBC News
Tutankhamun and the Age of the Golden Pharaohs website
ছবি: Google search
Contributed by Partha Bhowmick
Kolkata