অনেক বছর আগের কথা। সনটি ছিল ১৮২৬ খৃষ্টাব্দ । অস্ট্রেলিয়ার নিউসাউথওয়েল্স এর ক্যাম্পবেল্ টাউন অঞ্চল । জেমস্ ফেয়ারলী নামে একজন গণ্যমান্য চাষী ফ্রেডারিক ফিশার নামে এক ভদ্রলোকের বাড়ীর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি দূর থেকে লক্ষ্য করলেন, কেউ একজন ঐ বাড়ীর বারান্দার রেলিংএর ওপর বসে আছে। ফেয়ারলী শুনেছেন বাড়ীটির মালিক কিছুদিন যাবৎ বাইরে আছেন। জনশূন্য বাড়ীর রেলিংএ কে তবে বসে আছে? ভাল করে লক্ষ্য করার জন্য তিনি কিছুটা এগিয়ে গেলেন। তাকে দেখে লোকটি অদূরে বেষ্টনী ঘেরা ছোট্র পশুচারণ ক্ষেত্রের দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করে কি যেন দেখাল।
রেলিং এ বসা মানুষটির দেহটি কেমন যেন রহস্যময় মতে হওয়াতে ফেয়ারলী ভয় পেয়ে ওখান থেকে পালিয়ে এলেন। তিনি ঐ আবছা মূর্তিটি স্থির নিশ্চিত ছিলেন যে ওটা অবশ্যই কোন প্রেতাত্মার ছায়া হতে পারে।
ফিশার ছিলেন প্যারোলে ছাড়া পাওয়া একজন দাগী আসামী চাষাবাদ করে বর্তমানে তিনি বেশ সম্পন্ন চাষী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। ইতিপূর্বে ঋণের দায়ে তাকে কারাগারে বন্দী করা হয়। তিনি তার শহরের সম্পত্তি কোন এক বন্ধুর নামে বেনামা করে রেখেছিলেন । এই বন্ধুটির নাম ছিল জর্জ উয়োরাল। তিনিও একজন প্রাক্তন দাগী আসামী ছিলেন। পাছে ঋণদাতা আইনের সহায়তায় তার সহায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন এই ছিল ফিশারের আশঙ্কা । ছয়মাস জেল খাটার পর অপ্রত্যাশিতভাবে ফিশার ছাড়া পান এবং ঘরে ফিরে আসেন।
১৮২৬ খৃষ্টাব্দের জুন মাসে ভূত বা অপচছায়াটি দেখার ঠিক আগে আগে ফেয়ারলি একদিন লক্ষ্যকরলেন ক্যাম্পবেল টাউনের এক পান্থশালা থেকে প্রচুর পান করে মত্ত অবস্থায় গভীর রাতে ফিশার বাড়ীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফিশারের সঙ্গে ফেয়ারলীর এটাই শেষ দেখা। এরপর একদিনও ফেয়ারলী তাকে দেখেন নি।
ফিশারের বন্ধু উয়োরোল বলে বেড়াতে লাগলো যে ফিশার ইংল্যান্ডে ফিরে গেছেন।আর তার সেই যাত্রা সে এক গালগল্প বানিয়ে বলতে শুরু করলো। এমন ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে সে তার যাত্রার বর্ণনা দিল যে স্থানীয় লোকের মনে সহজেই বিশ্বাস জন্মালো। উয়োরোল বললো ফিশার লেডী ভনসেন্ট নামে একটি জাহাজে করে দেশের পথে পাড়ি জমিয়েছেন।সকলে জানেন দিন কতক আগেই এই জাহাজটি ক্যাম্পবেল টাউন ছেড়ে গেছে। কাজেই জনমনে সন্দেহের উদ্রেক হবার কোন অবকাশই ত নেই।
ফিশারের নিরুদ্দেশ হবার তিন মাস পর কর্তৃপক্ষ কেমন যেন একটু সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠেন। সন্দেহের বশবর্তী হয়েই তারা সিডনী গেজেটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন। তারা ঘোষণা করলেন ,যারা ফিশারের মৃতদেহের সন্ধান দিতে পারবে তাদের একশত ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে।
পুলিশ কিন্তু বসে নেই । তারা উয়োরোলকে বহু জিজ্ঞাসাবাদ করলো। তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেকের কারণ তারা দেখলো উয়োরোল দিব্বি ফিশারের ট্রাউজার পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উয়োরোল কিন্তু এর মধ্যে চালাকী করে তার অন্য চার বন্ধুকে ফিশারের হত্যাকারী বলে দাবী করলো। আরো দাবী করলো যে সে ঐ লোকগুলোকে ফিশারকে হত্যা করতে স্বচক্ষে দেখেছে। আর তার এইসব উল্টোপাল্টা বিবৃতি কর্তাব্যক্তিদের মনে সন্দেহের বীজ বুনতে থাকলো ।সন্দেহের বশবর্তী হয়েই তারা উয়োরোলকে হাতকড়া পরিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিল।
আর আশ্চর্যের বিষয় ,সেই মুহূর্তেই ফেয়ারলী মৃত ফিশারের রহস্যময় ছায়া দেখতে পেলেন। ফেয়ারলীর বারংবার অনুরোধে নিউল্যান্ড একজন কনস্টেবল একজন আদিবাসী সন্ধানকারীকে নিয়ে সেই বেষ্টনীঘেরা পশুচারণ ক্ষেত্রটিকে খোঁজ করতে গেলেন।তিনি অবাক হয়ে দেখলেন পশুচারণ ক্ষেত্রের রেলিং এ রক্তের দাগ শুকিয়ে আছে। আর সেই প্রেতাত্মা যে স্থানটি নির্দেশ করে সেই স্থানে পাওয়া গেল ফিশারের গলিত মৃত দেহ। নৃশংস ভাবে তাকে হত্যা করে জলা ভূমিটিতে তার দেহটি পুঁতে রাখা হয়েছে।
উয়োরোল এই মৃত্যুর জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হল। মৃত্যুর পূর্বে উয়োরোল স্বীকার করে যায় যে ফিশারের হত্যাকারী সেই বটে-তবে এই হত্যাকাণ্ডটি আকস্মিকভাবেই ঘটে-ইচ্ছাকৃতভাবে নয়- ইচ্ছাকৃতভাবে বা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে সে ফিশারকে হত্যা করেনি। তাই যদি হয় –আকস্মিক ভাবেই যদি ঘটনাটি রূপ নিয়ে থাকে তবে কেন সে যুক্তি সঙ্গত কারণের উল্লেখ করলো না? এ প্রশ্নেরই বা জবাব কি ?
Images Collected from Google