তেরো শতাব্দী। মেসোআমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল। ক্যাকটাসের উপর বসে তীক্ষ্ণ চোখে চারদিকে নজর রাখছে একটি ঈগল। তার ধারালো নখের মাথায় জিম্মি হয়ে আছে একটি সাপ। সতর্ক ঈগলটি নিজের শিকারকে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না। সাপটিও যেনো পরাজয় মেনে নিলো তার শক্তির কাছে। খুব সহজেই ঈগলের আহার হয়ে গেলো সাপটি। কিছুটা দূর থেকে এই অদ্ভূত দৃশ্য দেখতে লাগলো দুর্ভিক্ষ কবলিত উত্তরাঞ্চল ’আজলান’ থেকে আসা ‘নাহুয়াতল’ ভাষায় কথা বলা বেশ কিছু মানুষ। তাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলো কুয়ায়ুহকোয়াতেল নামের এক ব্যক্তি। ঈগলের নখে সাপকে বন্দী দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো কুয়ায়ুহকোয়াতেল ও তার দল। তারা ছিলো প্রতীকে ভীষণ রকমের বিশ্বাসী। এই জায়গাই তাদের নতুন আবাসস্থল –এই বিশ্বাস জেঁকে বসলো তাদের ভেতর। স্বয়ং দেবতার ইচ্ছেতেই তো এখানে পৌঁছেছে তারা। দেবতা হুইৎযিলোপোখতেলি নিজে ইঙ্গিত দিয়েছেন কুয়ায়ুহকোয়াতেলকে, ঈগলের নখে বন্দী সাপ যেখানে দেখা যাবে, সেটিই হবে তাদের নতুন ঠিকানা। কুয়ায়ুহকোয়াতেল তার সম্প্রদায়ের সবাইকে নিয়ে এই অঞ্চলেই গড়ে তুললো নিজেদের আবাসভূমি। আজলান থেকে আসা এই সম্প্রদায়ই পরবর্তীতে ‘অ্যাজটেক’ পরিচয়ে চিরকালের জন্য অমর হয়ে রইলো ইতিহাসের পাতায়।
অ্যাজটেকরা কিন্তু নিজেদেরকে এই নামে পরিচিত করতো না। তারা নিজেদেরকে ‘মেক্সিকা’ বলে পরিচয় দিতো। কিন্তু আজলান থেকে আসা জনগোষ্ঠীকে ‘অ্যাজটেক’ বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা। তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর ‘তেনোখতিৎলান’-এ গড়ে তোলা হয় অ্যাজটেকদের রাজধানী, যা বর্তমানে মেক্সিকো সিটি।
ছেলেবেলা থেকে আমরা এই অ্যাজটেকদের বর্বরতা ও অসভ্যতার গল্প শুনেই বড় হয়েছি। তারা নাকি তাদের দেবতাদের উদ্দেশ্যে মানুষ বলি দিতো। হয়তো আসলেই মানুষ বলি দিতো তারা, তবে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে মানুষ বলি দেয়ার দায় কি আমেরিকার ইতিহাসে একমাত্র অ্যাজটেকদের উপরই বর্তায়? আর যাদেরকে আমরা অসভ্য বলে চিনি, তাদের পক্ষে কি আসলে সভ্যতা রচনা করা সম্ভব? আর যদি সম্ভব হয়েই থাকে, তবে কি তাদের অসভ্য জাতি হিসেবে আখ্যা দেয়া যুক্তিযুক্ত? এসব প্রশ্নের উত্তর তখনই মিলবে, যখন আমরা অ্যাজটেকদের আসল ইতিহাসের অনুসন্ধানে নামবো।
১৫০২ সাল। সিংহাসনে বসলেন পরবর্তীকালের সবচেয়ে সফল নবম অ্যাজটেক রাজা দ্বিতীয় মকটেজুমা। তার ঘন, কালো চুলগুলোতে বাতাসের সাথে ঢেউ খেলে যায়। তার সরু নাক এবং প্রশস্ত কপাল চেহারায় এক অদ্ভূত আভিজাত্যের ছাপ তৈরী করে। মাথায় তার কুয়েৎজাল পাখির ঝকমকে সবুজ পালকের তৈরী সুউচ্চ মুকুট। তার কন্ঠস্বর স্পষ্ট ও বিনয়ী। কথিত আছে, তিনি এতোটাই প্রশান্ত যে, কথা বলার সময়ও তার ঠোঁটের স্পন্দন বোঝার কোনো উপায় থাকতো না। সিংহাসনে বসে সবচেয়ে সমৃদ্ধ অ্যাজটেক সাম্রাজ্য গড়তে মনোযোগী হলেন পরাক্রমশালী রাজা মকটেজুমা।
ঠিক একই সময়ে তেনোখতিৎলান থেকে নয় হাজার কিলোমিটার পূর্বে স্পেনের মেডেলিন গ্রামের প্রাসাদতুল্য একটি বাড়িতে বসে নিজের গন্তব্যের খোঁজ করে যাচ্ছে ১৭ বছর বয়সী রোগা শারীরিক গঠনের এক অস্থির তরুণ। নাম তার হার্নান্দো কোর্তেস। ছেলেবেলা থেকেই ভীষণ অসুস্থ থাকতো কোর্তেস। তার চেহারা ছিলো ফ্যাকাশে। কোর্তেসের মা-বাবা সবসময় আশঙ্কা করতেন, হয়তো অসুস্থতার কবলে পড়েই মারা যাবে সে এক দিন। নিজের স্বাস্থ্য ও শারীরিক দুর্বলতা ভীষণ হীনমন্যতা তৈরী করে কোর্তেসের ভেতর। মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে থাকে তার। সারাক্ষণই জেদ, অস্থিরতা ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত থাকতে লাগলো কোর্তেস। তার প্রচন্ড রকমের অস্থির স্বভাব তার মা-বাবার চরম বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালো। ১৪ বছর বয়সের কোর্তেসকে স্পেনের স্যালামাঙ্কা শহরে পাঠানো হলো ল্যাটিন ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য। কিন্তু দুই বছর পর দ্বিগুণ হতাশা নিয়ে সেখান থেকেও ফিরে আসেন হার্নান্দো কোর্তেস। আসলে তার গন্তব্য তো অন্য জায়গায়। কোনো কিছুতেই আনন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না কোর্তেস।
আঠারো বছর বয়সে ইতালিতে যুদ্ধে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আসে তার। কিন্তু ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে নতুন পৃথিবীর আবিষ্কারের কাহিনী। কোর্তেসের বয়স যখন মাত্র সাত বছর, তখন ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এক নতুন অঞ্চল আবিষ্কার করেছিলেন, যেটিকে তিনি এশিয়া ভেবে ভুল করেছিলেন। কোর্তেসের আঠারো বছর বয়স হবার পর আমেরিগো ভেসপুচির এক গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, সেই অঞ্চল আসলে সম্পূর্ণ আলাদা এক ভূখন্ড। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লো পৃথিবীর অপর প্রান্তের স্বর্ণের প্রাচুর্য্যের কাহিনী। কোর্তেসের মনে গেঁথে গিয়েছিলো ক্রিস্টোফার কলোম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের কাহিনী। মনে মনে তিনিও চাইতেন স্বর্ণ দিয়ে ভরপুর নতুন পৃথিবীর আবিষ্কর্তা হতে। আর সেই সুপ্ত ইচ্ছাকে একটি সুযোগ করে দেবার আশায় ইতালিতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিতে জাহাজে চড়ে বসেন কোর্তেস।
কোর্তেস যখন জাহাজে করে আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিচ্ছেন, ঠিক তখন একজন মায়ান মনিবের সেবা করে যাচ্ছে একজন ক্রীতদাসী। তার নাম লা মালিনশে। অসম্ভব বুদ্ধিমতী লা মালিনশের জীবনপথ কখনোই মসৃণ ছিলো না। বাবার মৃত্যুর পর তার নিজের মা তাকে ক্রীতদাসী হিসেবে বিক্রি করে দিয়ে নতুন স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের দিন কাটাচ্ছে। অথচ নরক-যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে লা মালিনশেকে। তার আসল নাম ছিলো মালিনালি। বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর তাকে লা মালিনশে পরিচয়েই সবাই চেনে। ক্রমাগত হাতবদল হতে থাকে পানায়াতে জন্ম নেয়া লা মালিনশে, একের পর এক পাল্টাতে থাকে তার মনিব। একজন ক্রীতদাসীর জীবনে কোনো আনন্দ থাকতে পারে না, বিষাদমাখা হয় তার জীবন। কিন্তু লা মালিনশের হৃদয়ে বিষাদের পরিবর্তে বাসা বেঁধেছে ঘৃণা, ক্ষোভ ও বিতৃষ্ণা। কোনো দিন সুযোগ পেলে সমস্ত প্রতিশোধ নিয়ে নিবে সে তার স্বজাতির কাছ থেকে।
এদিকে রোগা কোর্তেস তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছে পুরোদমে। তার সারাজীবনের অক্ষমতাই যেনো তার সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে তাকে সহায়তা করে চলেছে। পর্তুগালের রাজার পক্ষে হিস্প্যানিওলা ও কিউবাতে সফলভাবে নৌ-অভিযান সম্পন্ন করার পর নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় কোর্তেস। একের পর এক বেশ কয়েকটি অঞ্চল জয় করার পর আরও জয়ের আকাঙ্ক্ষা যেনো নেশার মতো পেয়ে বসে তাকে। নতুন পৃথিবীর প্রতিটি অভিযানই ছিলো অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতায় ভরপুর। তবে কোর্তেসের তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিলো না। উত্তেজনাপূর্ণ যে কোনো কাজই ছিলো তার পছন্দনীয়। তার দক্ষতায় মুগ্ধ হন কিউবার গভর্নর ডিয়েগো ডি ভেলাজকুয়েজ এবং নিজের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেন কোর্তেসকে। পরবর্তীতে স্যান্টিয়াগোর পৌর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও নিযুক্ত হন কোর্তেস।
ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে কোর্তেস সম্পূর্ণরূপে বদলে ফেললেন নিজেকে। একজন রাজার মতো দামী ভেলভেটের পোশাক, পাখির পালকযুক্ত দামী টুপি, সোনার লকেট পরতে শুরু করলেন তিনি। চেহারার রোগাভাবকে গাম্ভীর্য দিয়ে প্রতিস্থাপনের জন্য রাখলেন দাঁড়ি। কিন্তু এতো সমৃদ্ধিও সন্তুষ্ট করতে পারলো না তাকে। আসলে এতো শান্তিপূর্ণ জীবন কোর্তেসের কখনোই কাম্য ছিলো না। উত্তেজনায় ভরপুর জীবন তাকে আনন্দ দেয়।
কিউবাতে থাকাকালীনই কোর্তেস জানতে পারেন যে, স্বর্ণ দিয়ে ভরপুর অ্যাজটেক সাম্রাজ্যকে নাস্তানাবুদ করার সাহস কারো নেই। এর আগেও ভেলাজকুয়েজ একটি দলকে পাঠিয়েছিলেন সেখানে, কিন্তু তারা আর ফিরে আসে নি। কিন্তু নিজের একঘেঁয়ে জীবন নিয়ে সারাক্ষণই বিতৃষ্ণায় ভুগতে থাকা কোর্তেসের মতো বেপরোয়া তখন আর কেউ ছিলো না। আর এদিকে কোর্তেসের ক্ষমতায়ন ক্রমেই শঙ্কা তৈরী করছে ভেলাজকুয়েজের মনে। ভেলাজকুয়েজ অচিরেই তাকে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা শুরু করেছেন। আর তাই কোর্তেস যখন নিজের ইচ্ছায় অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে যেতে চাইছেন, তখন ভেলাজকুয়েজ আর দ্বিমত করেন নি। কেননা তিনি নিজেও চাচ্ছিলেন কোর্তেসকে পথ থেকে সরিয়ে দিতে।
এরই মাঝে এক চমৎকার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন অ্যাজটেক রাজা মকটেজুমা। জানা যায়, অ্যাজটেক সাম্রাজ্যকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গিয়েছেন রাজা মকটেজুমা। অসভ্য জাতি বলে খ্যাত এই অ্যাজটেকদের সভ্যতার চূড়ান্ত প্রমাণ মিলেছে খননকাজের মাধ্যমে পাওয়া স্থাপনাগুলো থেকে। অ্যাজটেকদের অভাবনীয় সুন্দর প্রাসাদগুলো এবং এর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা এটাই প্রমাণ করে যে, কুসংস্কারে বিশ্বাসী হলেও অ্যাজটেকদের চিন্তা-ধারা ও রুচি ছিলো ভীষণ পরিচ্ছন্ন। সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলো তাদের প্রযুক্তি।
অ্যাজটেক রাজধানী তেনোখতিৎলান আমেরিকার সবচেয়ে বড় শহর হওয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহরও ছিলো। তেনোখতিৎলান তখন ছিলো প্রধান রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ‘টেম্পল মেয়র’ নামের অ্যাজটেক মন্দিরটিও এই তেনোখতিৎলানেই অবস্থিত, যার স্থাপত্যকলা ছিলো চোখ জুড়িয়ে যাবার মতো সুন্দর। চমৎকার এই মন্দিরটিতে যে পিরামিড তৈরী করা হয়েছিলো সেটিই ছিলো মন্দিরটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা। অ্যাজটেকদের স্বর্ণের এতো প্রাচুর্য ছিলো যে, স্বর্ণকে তারা শুধুমাত্র অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ব্যবহারের জন্য তেমন প্রয়োজনীয় মনে করতো না। ধারণা করা হয়, সে সময়ের সবচেয়ে ধনী সভ্যতা গড়ে তুলেছিলো অ্যাজটেকরা।
অ্যাজটেকরা তাদের বিপুল সেনাবাহিনী ও দক্ষ যুদ্ধকৌশলের জোরে প্রায় ৫০০ রাজ্যের উপর আধিপত্য স্থাপন করেছে। আশেপাশের সব রাজ্যই জানতো যে, অ্যাজটেকদের সক্ষমতার কাছে তারা কোনোভাবেই পেরে উঠবে না। তাই নীরবে অ্যাজটেক রাজার অধীনস্থতা মেনে নিয়েছিলো মায়ানসহ আরো অসংখ্য রাজ্যগুলো। তবে ছোট ছোট অসংখ্য রাজ্য নিয়ে গড়ে ওঠা বিশাল অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের শত্রুরও কোনো অভাব ছিলো না। ভেতরে ভেতরে অনেকেই ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছিলো মনের ভেতর অ্যাজটেকদের বিরুদ্ধে। প্রকৃতিপূজারী অ্যাজটেকরা ছিলো বহুদেবতা ও অপদেবতার উপাসক। দেবতাদের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষ বলি দেয়ার জন্য তারা বেছে নিতো দাস এবং বন্দীদেরকে। কে জানে? যাদেরকে বলি দেয়া হতো, তাদের পরিবার থেকেই হয়তো শুরু হয়েছিলো ঘৃণার ইতিহাসের।
অ্যাজটেক সভ্যতার সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর বিষয় ছিলো শিশু-কিশোরদের জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা। যে জাতি শিক্ষা সম্পর্কে এতো সচেতন, সে জাতির এতো সমৃদ্ধিতে নিশ্চয়ই অবাক হবার কিছু নেই। দাসপ্রথা অ্যাজটেকদের মাঝে থাকলেও দাসদেরকে তাদের যোগ্য সম্মাননা দেয়া হতো সেখানে।
তবে শিক্ষা নিয়ে সচেতনতা থাকলেও কিছু নেতিবাচক দিকও ছিলো তাদের মধ্যে। শ্রেণীবৈষম্য ছিলো ভীষণ প্রকট তাদের মাঝে। অভিজাত পরিবারের সদস্যরা যে ধরনের পোশাক পরতো, সেই ধরনের পোশাক ভুলক্রমে দাসশ্রেণীর কেউ পরে ফেললে তাকে পেতে হতো কঠোর শাস্তি। আসলে এ ধরনের অবান্তর নিয়মনীতি ও কুসংস্কারে বিশ্বাসই অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের পতনের মূল কারণ ছিলো। স্পেন থেকে আসা এক দল মানুষকে দেবতার পাঠানো দূত মনে করে স্বয়ং রাজা মকটেজুমাই নিজের রাজ্যে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছিলেন, যার পরিণাম হয়েছিলো ভয়াবহ।
অবশ্য এ সব বর্ণনাই আমরা স্পেনীয় দলিল থেকে পেয়েছি। অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে স্পেনীয়দের অভিজ্ঞতার বর্ণনা নিয়ে লেখা বই ‘বুক টুয়েলভ’ থেকেই মূলত আমরা সে সময়ের সব বিবরণ পেয়েছি। সুতরাং, সেই লেখায় পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। অনেকেই মনে করেন, নিজেদের নিষ্ঠুরতার নমুনা আড়াল করবার জন্য এবং কোর্তেসের ছল-চাতুরী ও বিশ্বাসঘাতকতাকে প্রশ্রয় দেবার উদ্দেশ্যেই এসব কাহিনীর সৃষ্টি করেছে স্পেনীয়রা।
সে যা-ই হোক, কোর্তেস কিন্তু ঠিকই পৌঁছে গিয়েছিলেন স্বর্ণভূমি জয় করবার জন্য। আগে পাঠানো স্পেনীয় দলটিকে উদ্ধার করবার জন্য আরেকটি দল প্রস্তুত করেন ভেলাজকুয়েজ, যার নেতৃত্ব দেয়া হয় হার্নান্দো কোর্তেসকে। নতুন বানানো দলটির সদস্যরা ছিলো খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো ভেলাজকুয়েজ জানতেন, এরাও মারা পড়বে শেষ পর্যন্ত। আর সম্ভবত এ কারণেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দায়িত্বটা তিনি অনভিজ্ঞ কোর্তেসকেই দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য হয়তো কোর্তেসের সাথেই ছিলো। তবে তার যোগ্যতায় প্রশ্ন তোলাও ভীষণ অপরাধ হয়ে যাবে। কেননা একেবারে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই এক মাসের মধ্যে ৫০০ লোকের একটি দল তৈরী করে ফেললেন কোর্তেস এবং প্রস্তুত হলেন ছয়-ছয়টি জাহাজ নিয়ে নতুন পৃথিবী ও নতুন সমৃদ্ধির উদ্দেশ্যে।
এতো প্রস্তুতির পরও কোর্তেসের সামনে তৈরী হলো প্রতিবন্ধকতা। যাদেরকে উদ্ধারের জন্য কোর্তেসের দলকে পাঠানো হচ্ছে, ঠিক শেষ মুহূর্তে ফিরে এলো সেই দলের নেতা জুয়ান ডি গ্রিজালভা। সুতরাং কোর্তেসের দলকে পাঠানোর কোনো উদ্দেশ্যই আর অবশিষ্ট রইলো না ভেলাজকুয়েজের। কিন্তু কোর্তেস এসব তোয়াক্কা না করে ভেলাজকুয়েজকে না জানিয়েই সামান্য কিছু খাবার সাথে করে রওয়ানা হয়ে গেলেন সদ্যপ্রস্তুত ছয়টি জাহাজ নিয়ে। গ্রিজালভার মুখে শোনা অ্যাজটেক সাম্রাজ্য ও এর ক্ষমতাধর রাজার গল্প কোর্তেসের উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে যেনো বহুগুণ। স্পষ্ট অনুভব করছেন কোর্তেস, এটাই তার গন্তব্য। নিজের অভিযানের অভিজ্ঞতা সরাসরি স্পেনের রাজার কাছে লিখে পাঠাতে শুরু করলেন তিনি, যেগুলো ভবিষ্যতের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
বিশাল স্পেনীয় জাহাজগুলোর আগমনের খবর অ্যাজটেক রাজা দ্বিতীয় মকটেজুমাকে চিন্তিত করে তুললো। তিনি তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তবে ভাগ্য হয়তো প্রতিটি মুহূর্তে কোর্তেসকে সহায়তা করছিলো। মেক্সিকান উপকূলে পৌঁছুতেই তিনি পেয়ে গেলেন কিউবার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় জাহাজডুবিতে সর্বহারা জেরোনিমো ডি অ্যাগুইলারকে, যিনি মায়ানদের সাথে বহু দিন ধরে দাস হিসেবে কর্মরত আছেন এবং মায়ান ভাষায় দক্ষতাও অর্জন করেছেন। অ্যাগুইলার একজন স্প্যানিশ। তার অপর সঙ্গী গেরেরো মেক্সিকোর জীবনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলেও তিনি এখনও বিষণ্ণতায় ভুগছেন। কোর্তেসের বাহিনীকে দেখে তিনি যেনো আরও একবার নিজের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোর্তেসকে তিনি অনুরোধ করলেন স্বদেশে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। বুদ্ধিমান কোর্তেস বিনিময়ে তার সাহায্য চাইলেন, মেক্সিকান লোকদের সাথে তথ্য আদান-প্রদানে দোভাষীর ভূমিকা পালনের সাহায্য। অ্যাগুইলারও রাজি হয়ে গেলেন। আর এভাবেই শুরু হলো অ্যাডভেঞ্চারে পূর্ণ কোর্তেসের জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়।
স্বভাবতই প্রথম দিকে মায়ানরা স্পেনীয় বাহিনীকে হুমকি ছাড়া অন্য কিছুই ভাবলো না এবং এক দফা যুদ্ধও হয়ে গেলো তাদের মাঝে। কিন্তু যুদ্ধে কোর্তেসের কাছে হেরে গেলো তারা। উপায় না দেখে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলো তারা কোর্তেসের সাথে এবং প্রচুর স্বর্ণ ও বিশ জন ক্রীতদাসী উপহার দিলো তাদেরকে। এই বিশ জন ক্রীতদাসীর মাঝেই একজন ছিলো লা মালিনশে বা মালিনালি। হ্যাঁ, সেই বিক্রি হয়ে যাওয়া রমণীর দেখা হলো অবশেষে হার্নান্দো কোর্তেসের সাথে এবং অদ্ভূতভাবে জীবনের মোড় পাল্টে গেলো তার।
লা মালিনশের চোখে কিছু একটা ছিলো, যা এড়িয়ে যেতে পারলেন না কোর্তেস। তাই তো এতো জন ক্রীতদাসীর মধ্যে একমাত্র লা মালিনশেই তার নজর কাড়লো। জানতে ও বুঝতে চাইলেন কোর্তেস তাকে এবং আবিষ্কার করলেন যে, তার ধারণা ভুল ছিলো না। তিনি মালিনশের চোখে যা দেখেছিলেন তা মিথ্যা ছিলো না। মালিনশের অন্তরে ছিলো প্রতিশোধস্পৃহা এবং তার চেহারায় তা ফুটে উঠছিলো। বহু দিন ধরে ক্রীতদাসী থাকার সুবাদে অনেক ভাষায় পারদর্শী ছিলেন মালিনশে, আর এটিই কোর্তেসের জন্য অনেক বড় কারণ হয়ে দাঁড়ালো তাকে সম্মানিত করবার ক্ষেত্রে। মালিনশে মায়ান এবং নাহুয়াতল উভয় ভাষাই জানতেন। তাই কোর্তেস তার কাছেও সহায়তা চাইলেন দোভাষীর ভূমিকা পালনের জন্য। ফলে কোর্তেস, অ্যাগুইলার এবং মালিনশে একটি চমৎকার দল গঠন করে কাজ করা শুরু করলেন অ্যাজটেক ও অ্যাজটেকদের অধীনস্থ রাজ্যগুলোর সাথে যোগাযোগ করবার ক্ষেত্রে।
আসলে মালিনশের মনে তো আগে থেকেই স্বজাতির প্রতি ছিলো ভীষণ ক্ষোভ। আর কোর্তেসের কাছে যে সম্মান সে পেয়েছে, তা তো এর আগে সে কোনো দিন পায় নি। তাই অ্যাজটেকদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কোর্তেসকে সাহায্য করতে শুরু করলো সে। কোর্তেসের সাথে মালিনশের এই সম্পর্ক আরো গভীর হলো এক সময়। বিয়ে করলেন তারা। পরবর্তীতে মালিনশের গর্ভে কোর্তেসের এক ছেলে সন্তানও জন্ম নিয়েছিলো। সুতরাং মালিনশের অপূর্ব যোগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহের আর অবকাশ থাকে না। কোর্তেস নিজে স্বীকার করেছিলেন যে, মালিনশের বুদ্ধিমত্তা ও পরামর্শই তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলো। হার্নান্দো কোর্তেসের স্ত্রীর সম্মান পাওয়া লা মালিনশে পেলো এক নতুন পরিচয়। মালিনশে থেকে সে হয়ে গেলো ডোনা মারিনা।
মায়ানদের সাথে তাবাস্কো শহরে কিছু দিন থাকতেই চতুর কোর্তেস বুঝে ফেললেন যে, আসলে অ্যাজটেক রাজার অধীনস্থতায় অধিকাংশ রাজ্যই অসন্তুষ্ট। কিন্তু বিশাল অ্যাজটেক সেনাবাহিনী ও যুদ্ধাঙ্গনে তাদের অদ্ভূত দক্ষতার কারণেই তাদের অধীনস্থতা মেনে নিতে হয়েছে সবাইকে। কোর্তেস এই আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগ লুফে নিলেন। তিনি অ্যাজটেকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে মায়ানদের সাহায্য চাইলেন। মায়ানরা রাজিও হয়ে গেলো। শুরু হলো নতুন এক যুদ্ধের প্রস্তুতি।
অ্যাজটেক রাজার পরাক্রমশীলতা ও তার সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যা পৃথিবী জয়ের স্বপ্নে বিভোর কোর্তেসের মনে ভয় তৈরী করতে পারে নি। বরং তিনি আরও দ্বিগুণ উদ্যমে নতুন আঙ্গিকে সেনাবাহিনী গড়তে শুরু করেন এবং রওয়ানা হন তার জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চারের উদ্দেশ্যে।
তেনোখতিৎলানে পৌঁছানোর পর প্রথমবারের মতো বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান বেপরোয়া হার্নান্দো কোর্তেস। মুগ্ধতার সীমা থাকে না স্পেন থেকে আসা দলটির। এমন চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে গড়া শহর দেখে রীতিমতো সবার চক্ষু চড়কগাছ! তাদের অভিজাত প্রাসাদ, পাথরের তৈরী মন্দির, বিশাল পিরামিড ও উন্নত সেচ ব্যবস্থা দেখে অভিভূত না হয়ে পারে না কোর্তেস। জয়ের ইচ্ছা আরও জোরেসোরে জেঁকে বসে কোর্তেসের মনে। এমন শক্তিকে পদানত করা তার চাই-ই চাই।
মিথ্যে আর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন কোর্তেস। স্পেন থেকে আসা অপরিচিত দলটির পরিচয় জানবার জন্য রাজা মকটেজুমা তাদের কাছে দুই জন দূত পাঠালে কোর্তেস তাদেরকে বলেন যে, এক অদ্ভূত হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য প্রচুর স্বর্ণ প্রয়োজন তাদের এবং এ জন্যই রাজা মকটেজুমার কাছে এসেছেন তারা। নিজেকে পৃথিবীর একজন প্রচন্ড ক্ষমতাধর রাজার পাঠানো দূত হিসেবেও দাবী করলেন কোর্তেস। তার কথায় বিশ্বাস করে স্বর্ণ দিয়ে তাকে সাহায্য করতে লাগলেন মকটেজুমা। আর সেই স্বর্ণ একটি জাহাজের মাধ্যমে সরাসরি পর্তুগালের রাজার কাছে পাঠিয়ে দিতেন কোর্তেস। সরল অ্যাজটেক রাজা এই ছল-চাতুরী বুঝতে পারেন নি। নিজের দরবারে আমন্ত্রণ জানান তিনি কোর্তেসকে। সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে গ্রহণ করা হয় অতিথিকে। কিন্তু এমন স্নিগ্ধ আতিথেয়তার মান রাখেন নি খলনায়ক কোর্তেস। কিছু দিন আগে কয়েকজন স্পেনীয় সৈন্যের সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জের ধরে ইচ্ছে করেই কোর্তেস মকটেজুমাকে দোষারোপ করতে থাকেন এবং সেই অজুহাতে তাকে বন্দীও করে ফেলেন। মকটেজুমার জায়গায় তখন আড়াল থেকে রাজ্য পরিচালনা করছিলেন কোর্তেস। নিরুপায় মকটেজুমার সে সময় কিছুই করার ছিলো না। তবে ঘটনার মোড় ঘুরে যেতে বেশি সময় লাগে নি।
গভর্নর ভেলাজকুয়েজের আদেশ অগ্রাহ্য করে একটি অবৈধ মিশন পরিচালনার বিষয়ে কোর্তেস অবগত ছিলেন। তাই ভেলাজকুয়েজের কোনো বিশ্বস্ত লোক তার জাহাজে থাকতে পারে –এই আশঙ্কায় একটি বাদে অন্য সবগুলো জাহাজ ধ্বংস করে দেন কোর্তেস। কিন্তু তবুও ভেলাজকুয়েজের বাহিনী খুঁজে বের করে ফেলে কোর্তেসকে। এতে কোর্তেস ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হয় নিজের অর্ধেক সেনাবাহিনী নিয়ে। আর বাকি অর্ধেক সেনাবাহিনীকে অ্যাজটেক নগরীর দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়, যার নেতৃত্ব দেন পেদ্রো দে আলভারেদো। এরই মধ্যে শুরু হয় অ্যাজটেকদের নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার উৎসব। নাচ-গান, আমোদ-প্রমোদের মধ্যে হঠাৎ করে অ্যাজটেকদের ওপর আক্রমণ করে বসে আলভারেদো। এতে প্রায় শ খানেক অ্যাজটেক মারা যায়। এমন বর্বর আচরণে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ অ্যাজটেকবাসী পাল্টা আক্রমণ চালায় স্পেনীয় সেনাবাহিনীর ওপর।
এদিকে ভেলাজকুয়েজের বাহিনীকে পরাজিত করে তেনোখতিৎলানে ফিরে আসেন কোর্তেস। কিন্তু ফিরে এসে দেখতে পান প্রচন্ড বিশৃঙ্খল পরিবেশ ইতিমধ্যেই তৈরী হয়ে গিয়েছে। প্রথম বারের মতো অ্যাজটেকদের শক্তি উপলব্ধি করেন কোর্তেস। তাদের রণকৌশলের কাছে কোর্তেসের সেনাবাহিনী ছিলো নগণ্য। অন্য কোনো উপায় না দেখে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কোর্তেস। কিন্তু অ্যাজটেকরা সহজ-সরল হলেও বোকা ছিলো না। পালিয়ে যাওয়ার সমস্ত রাস্তা, সমস্ত সেতু ধ্বংস করে দিলো তারা। তাই কোর্তেসের নির্দেশে তার সেনাবাহিনী ভ্রাম্যমাণ অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করলো। কিন্তু হিতে হলো বিপরীত। ভ্রাম্যমান অস্থায়ী সেতুর মাধ্যমে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে সেতুর নিচের টেক্সকোকো হ্রদে ডুবে মারা পড়লো অনেক স্পেনীয় সৈন্য। এ ছাড়া অ্যাজটেকদের ‘জাগুয়ার ওয়্যারিওর্স’ এবং ‘ঈগল ওয়্যারিওর্স’ বাহিনীর হাতেও অগণিত স্প্যানিশ সৈন্য প্রাণ হারায়। কোর্তেস সেখান থেকে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যান।
তেনোখতিৎলানের এই বিশৃঙ্খলার মাঝেই রাজা মকটেজুমার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। কিন্তু তাকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সেটা স্পষ্ট জানা যায় নি। অনেকে বলেন, স্প্যানিশরাই হত্যা করেছে মকটেজুমাকে, কিন্তু অনেকে আবার এ-ও বলেন যে, বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি হিসেবে অ্যাজটেক অধিবাসীরাই মেরে ফেলেছে তাদের রাজাকে।
১৫২০ সালে ঘটে যাওয়া সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে হেরে গেলেও কোর্তেস আবারো ফিরে এসছিলেন তেনোখতিৎলানে। ছেড়ে দেবার পাত্র তো ছিলেন না তিনি। তবে ততো দিনে ইউরোপ থেকে আসা রোগ গুটিবসন্ত ছড়িয়ে পড়েছে চমৎকার স্থাপত্যকলার অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে। অ্যাজটেকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রচন্ড দুর্বল হওয়ায় গুটিবসন্তের সাথে লড়াইয়ে পেরে ওঠে নি তারা। তার ওপর খাদ্যের অভাব তো ছিলোই। দুর্ভিক্ষ, রোগের প্রকোপ আর স্পেনীয়দের কামানসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে এক সময়ের প্রভাবশালী অ্যাজটেকবাসী। পরাজিত হয় কোর্তেসের বাহিনীর কাছে। সে দিন আর সাপকে জিম্মি করা কোনো ঈগল দেখা যায় নি। চোখ জুড়ানো স্বর্ণভূমির ধ্বংসস্তূপের ওপর হার্নান্দো কোর্তেস রচনা করলেন এক নতুন শহর, মেক্সিকো সিটি।
রেফারেন্সঃ
- লা নোচে ত্রিস্তে: অ্যাজটেকদের হাতে স্প্যানিশ দখলদারদের ধরাশায়ী হওয়ার রাত
- Aztec Empire
- Aztec Civilization
- Christopher Columbus
- আজটেক সাম্রাজ্য
- La Malinche
- হার্নান কর্টেস – Hernán Cortés
- Hernán Cortés
- The Aztecs Explained
- The Aztecs – A Clash of Worlds
- In Our Time: S14/07 The Siege of Tenochtitlan
- Doña Marina “La Malinche”, the Most Important Woman in Mexican History: Mexico Unexplained