মোঘল সম্রাটেরা কখনও কখনও তাদের সম্রাজ্ঞীদের মনোরঞ্জনের জন্য জলজ্যান্ত নর্তকী উপহার দিতেন। বর্তমান সমাজে এই ধরনের উপহার সত্যিই এক আশ্চার্য্যজনক উপহার। আজকে আমরা এখানে সেই মোঘল দরবারের বিশেষ উপহার জীবন্ত নর্তকী সম্পর্কে আলোচনা করবো। বাবর ১৫২৬ সালে ভারত বিজয় করার মাধ্যমে মোঘল মুসলমানরা ভারতে আসলো। জাতিতে তুর্কি বাবর বেড়ে উঠেছিলেন মধ্য এশিয়ার তুর্কি ও মোঙ্গল সংস্কৃতিতে। ‘বাবরনামা’ থেকে আমরা জানতে পারি যে, ভারতের বিভিন্ন জিনিস তাকে অবাক করেছিল। ভারতের প্রকৃতি-রূপ-রস উপভোগ করলেও,তিনি সবচাইতে বেশি অভিভূত হয়েছিলেন ভারতের নৃত্য পারদর্শিতা দেখে।
কারণ তুর্কির নৃত্যকলার সাথে ভারতের নৃত্যকলার প্রচুর বৈসাদৃশ্য ছিল। বাবরকন্যা গুলবদন বানু বেগম একমাত্র মুসলমান জীবনী লেখিকা। তাঁর অমর গ্রন্থ ‘হুমায়ুননামা’তে এই অনুভূতি গুলিই ব্যক্ত করেছেন। তুর্কিতে বেলি ড্যান্সের প্রচলন ছিল। তার ধরন ছিল ভারতের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তুর্কির নাচের মেয়েরা শুধু কোমর দুলাতো। কোমরের সঞ্চালনই ছিল তাদের প্রধান নাচ। অন্যদিকে, ভারতীয় নর্তকীদের মাদকতাপূর্ণ ঘাড়, চোখ, ও মাথা দোলানো নাচ দেখা ছিল মোঘলদের কাছে একটা নতুন অভিজ্ঞতা। তবলার সাথে ঘুঙুরের আওয়াজ, পায়ের মুদ্রা সমস্ত কিছুই তাদেরকে মোহাবিষ্ট করে রাখতো। মোটামোটিভাবে তারা এই সমস্ত নর্তকীদের দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিল।
বাবরের জীবনী থেকে জানা যায়, তারা বিশ্বাস করতো- সুখি ও প্রাণচঞ্চলপূর্ণ নারী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরির জন্য আবশ্যক এবং এই কারণে মোঘল হারেমে অবস্থানকারী খালা, বোন ও স্ত্রীদের মনোরঞ্জনের দিকে সবসময়ই সম্রাটেরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতেন। সম্রাট তাদেরকে কবিতা লেখা, খেলাধুলা করা, গল্প লেখার ব্যবস্থা করতেন। তাদের জন্য তীর, ধনুক, পোলো, লুডু, দাবা ইত্যাদি খেলার ব্যবস্থাও করতেন। অর্থাৎ মোঘল রমনীদের নিত্য বিনোদনের জন্য একর পর এক উপহারের ব্যবস্থা করতেন। এসবের মধ্যে আশ্চার্যজনক উপহারটি ছিলো, যে যত বেশি প্রিয়, তাকে তত দামী নাচের মেয়ে বা নর্তকী উপহার দিত। এজন্য মোঘল দরবারে নর্তকীদের বিশেষ ভূমিকাও ছিল।