মিটফোর্ড হাসপাতাল ও কিছু স্মৃতি
শায়েস্তা খাঁন অসম্ভব দক্ষ একজন শাসক। তিনি যথেষ্ট যোগ্যতার সাথে রাজকার্য করে মর্যাদার সাথে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি মোঘল স¤্রাট শাহজাহানের শ্যালক ও আওরঙ্গজেবের মামা ছিলেন। অত্যন্ত উঁচু বংশের সন্তান বলে দিল্লীর দরবারে তার ছিল অপ্রতিহত প্রভাব। ১৬৬৩ সালে তিনি সুবাহ বাংলার সুবাহদার নিযুক্ত হন। দাক্ষিণাত্যে থাকার সময় শিবাজির পাঠানো গুপ্তচরের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে বাংলায় তিনি একবছর পরে আসেন ও সুবাহদারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আজ যেখানে মিটফোর্ড/সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে, সেই এলাকায় কাটরা পাকুড়তলী নামে একটি প্রাসাদে শায়েস্তা খাঁন বসবাস করতেন। তাঁর সময় ১৬৬৬ সালে জ্যাঁ ব্যাপ্টিস্ট টেভারনিয়ার নামে একজন পর্যটক ঢাকায় আসেন। তার লেখা ডায়েরি থেকে জানা যায় যে, তিনি শায়েস্তা খাঁনের সাথে ঐ প্রাসাদেই সাক্ষাত করেন। বর্তমানে প্রাসাদটি ধ্বংস হয়ে গেছে। তার কোন চিহ্ন নেই। কিন্তু ঐ সময়ের বাবুবাজার ঘাটটি আজও বর্তমান রয়েছে কালের সাক্ষী হিসেবে। শায়েস্তা খাঁন তার সুবাদারির প্রথম দিকে এখানে একটি মনোরম ছোট প্রাসাদ, নহবতখানা ইত্যাদি তৈরী করে বসবাস শুরু করেন। পরে মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় নবাবী আমলে নবাবের ও তার পরিবারের জন্য একটি মসজিদ তৈরী করা হয়। মসজিদটি খুবই
সুন্দর ও আকর্ষনীয় ছিল। এই মসজিদের পাশেই ছিল একটি সৌধ। সৌধটি ছিল শায়েস্তা খানের মেয়ে লাভলি খানমের। চার্লস ডয়লির আঁকা ছবি থেকে এটি অরো স্পষ্ট বোঝা যায়। চিত্রকর্মও ইতিহাস পাঠের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বহুকাল পরে সেইখানে মিটফোর্ড হাসপাতাল তৈরী করা হয়। পরবর্তীতে যখন হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ড বড় করতে গিয়ে শায়েস্তা খানের মেয়ে লাভলি খানমের সৌধটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। ভাঙ্গার পর তার কবর থেকে সোনার আতর দান, গোলাপ বাস ও লোবান দান পাওয়া যায়। তার কবর থেকে যে হাড়গুলো পাওয়া যায় তা ফেলে দিয়ে তার কবরের যে অসম্মান দেখানো হয়, তার বিরুদ্ধে সেই সময় মুসলমানরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তখন উত্তেজনা যেন কোন শান্তি ভঙ্গের কারন না হয়, সেজন্য তখনকার ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহ কবর থেকে পাওয়া হাড়সহ সমস্ত কিছু নিয়ে আবার কবরে মাটি চাপা দেয়ার ব্যবস্থা করেন এবং সেখানে নতুন করে একটি সমাধি তৈরী করে দেন। সেটি শাহজাদি খানমের সমাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এতে শহরবাসি শান্ত হয়। সমাধি সৌধটি মোঘল সুবাহদার শায়েস্তা খাঁনের মেয়ে লাভলি খানমের।
ক্যাপশন ঃ বাবুবাজার ঘাট, নহবতখানা, সেতু ও লাভলি খানমের সমাধি (সৌজন্যে, চার্লস ডয়লির আঁকা ছবি)।, মিটফোর্ড হাসপাতাল,শায়েস্তা খাঁন.